যুক্তরাষ্ট্রের সংসদভবন ক্যাপিটলে ঢুকে বিক্ষোভ দেখালেন উত্তেজিত ট্রাম্প সমর্থকরা। পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতির পর ট্রাম্প সমর্থকরা কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করলে পুলিশের গুলিতে অন্তত ৪ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে ওয়াশিংটন ডিসি পুলিশের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
এদিকে এ ঘটনার পর রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
ডয়চে ভেলে অনলাইন বাংলারে এক প্রতিবেদনে এ ঘটনাকে নজিরবিহীন আখ্যা দিয়ে বলা হয়, অ্যামেরিকার ইতিহাসে এমন ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সংসদভবন ক্যাপিটলে ঢুকে পড়লেন উত্তেজিত ট্রাম্প সমর্থকরা। পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতির পর কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেন তাঁরা। দখল নেন ক্যাপিটল ভবনের একতলা। ভিতরে তখন সেনেট এবং কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলছে। বিক্ষোভকারীদের থামাতে পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় এবং পেপার স্প্রে ব্যবহার করে। তাতেও কাজ না হলে বাধ্য হয়ে গুলি চালাতে হয়। ঘটনায় প্রথমে একজনের মৃত্যুর খবর জানা যায়। পরে হাসপাতালে আরো তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
পুলিশের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, ক্যাপিটল ভবন ঘিরে হামলা-সংঘাত-সংঘর্ষ চলাকালে যে ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, তিনি একজন নারী।
বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, ওই নারী ক্যাপিটল ভবনের ভেতরেই নিহত হন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসি বলেছে, ওই নারী মার্কিন বিমানবাহিনীর সাবেক এক কর্মকর্তা। সান দিয়াগোর বাসিন্দা ওই নারীর নাম অ্যাশলি ব্যাবিট।
ওয়াশিংটন ডিসি পুলিশ জানায়, তারা ৫২ জনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্য ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কারফিউ ভঙ্গের অভিযোগে।
যেভাবে সূত্রপাত-
অ্যামেরিকায় নভেম্বরের ৩ তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফলাফল সামনে আসতেই তা মানতে অস্বীকার করেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। কারচুপির অভিযোগ তোলেন। আদালতেও গিয়েছিলেন তাঁর সমর্থকরা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আদালত জানিয়েছে, ট্রাম্প সমর্থকেরা নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ফলে তাঁদের অভিযোগ ধোপে টেকেনি। আদালত যাই বলুক, নিজের বক্তব্য থেকে সরতে চাননি ট্রাম্প। বরং যত দিন গিয়েছে, সমর্থকদের ততই উত্তেজিত করেছেন তিনি। তারই চরম পরিণতি দেখা গেল বুধবার। এর এক দিন আগেই একটি সভায় ট্রাম্প ফের ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি হার স্বীকার করছেন না। এবং সমর্থকরাও যেন তাঁর পাশে থাকেন।
বুধবার ক্যাপিটলে যৌথ সভা বসেছিল। কংগ্রেস এবং সেনেটের সদস্যরা সেখানে ছিলেন। এ দিনই জো বাইডেনের জয় সরকারি ভাবে স্বীকৃত হওয়ার কথা ছিল। অধিবেশনে প্রস্তাবের পক্ষে বিপক্ষে আলোচনাও শুরু হয়েছিল। সেখানে কয়েকজন রিপাবলিকান সেনেটর ট্রাম্পের বক্তব্যকে সমর্থন জানাচ্ছিলেন। তবে সকলে নন। ভাইস প্রেসিডেন্ট পেনস প্রথমে যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। বাইডেনের জয়ের বিষয়ে আলোচনা প্রস্তাব আনেন। তখনই কয়েকজন রিপাবলিকান সদস্য অ্যারিজোনায় বাইডেনের জয় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। পেনস অবশ্য তা গুরুত্ব দেননি। পরে তাঁদের প্রস্তাব ভোটে খারিজ হয়ে যায়।
আরেক রিপাবলিকান সদস্য, ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ ঘনিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাককোনেল বলেন, এ ভাবে প্রতিবাদ দেখানো অনুচিত। শেষ পর্যন্ত মার্কিন সংবিধান এবং মার্কিন গণতন্ত্রকে মেনে চলতে হবে। তাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সংসদের ভিতরে যখন এ সব চলছে, ক্যাপিটল ভবনের বাইরে তখন ধীরে ধীরে জড়ো হতে থাকেন ট্রাম্প সমর্থকরা। ট্রাম্পের হার তাঁরা মেনে নিচ্ছেন না বলে স্লোগান দিতে থাকেন। বেশ কিছুক্ষণ তা চলার পরে ক্রমশ ক্যাপিটল ভবনের দিকে এগোতে থাকেন তাঁরা। ভেঙে দেন ব্যারিকেড। পুলিশ তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। মারমুখী সমর্থকরা ক্যাপিটল ভবনের ভিতরে ঢুকে পড়েন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এবং পেপার স্প্রে ছুড়তে থাকে। তাতেও লাভ হয়নি। এরপর ঘটনাস্থলে পৌঁছায় রায়ট পুলিশ। তারা বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে বাধ্য হয়েই গুলি ছোড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গুলিতে এক নারী লুটিয়ে পড়েন। তিনি মার্কিন এয়ারফোর্সের সাবেক অফিসার এবং কট্টর ট্রাম্প সমর্থক ছিলেন। তাঁর কাঁধে গুলি লেগেছিল। দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতালেই আরো তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে কোনো কোনো সংবাদসংস্থা দাবি করেছে। আরো বেশ কিছু মানুষ আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। তবে কতজনের শরীরে গুলির আঘাত রয়েছে, এখনো তা স্পষ্ট নয়। বিক্ষোভকারীদের দাবি, নিহত আরেক ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় টানতে টানতে নিয়ে যায় পুলিশ। আহত অবস্থাতেই তাঁকে মারা হয়। গোটা ঘটনায় হতভম্ব অ্যামেরিকাবাসী।
ওয়াশিংটনের মেয়র সন্ধে ছয়টা থেকে কারফিউ জারি করেন। তবে তারপরেও যত্রতত্র বিক্ষোভকারীদের ঘুরতে দেখা গিয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসের অধিবেশন অবশ্য বন্ধ করা হয়নি। গভীর রাত পর্যন্ত অধিবেশন চলেছে। বুধবার গভীর রাতে ১৫ দিনের জন্য ওয়াশিংটনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।