মাহবুব আলম
ভারতে চলমান কৃষক আন্দোলন শুধুমাত্র এই উপমহাদেশ নয়, একপ্রকার সারা পৃথিবীকেই উত্তাল করে তুলেছে। অনুমিত ২৫ কোটি কৃষকের অংশগ্রহণভিত্তিক এ আন্দোলনকে সমসাময়িক কালের এক অবিস্মরণীয় ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করাটাই যুক্তিযুক্ত।
ভারতীয় ধনিক শ্রেণির কট্টর দক্ষিণপন্থি অংশের প্রতিনিধি আরএসএস এবং বিজেপির পক্ষ থেকে কৃষি বিল নামের ৩টি কালাকানুন, পার্লামেন্টারি রীতিনীতিকে উপেক্ষা করে, বিরোধীদের আলোচনার সুযোগ না দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ধ্বনি ভোটে পাস করিয়ে নেবার এই তড়িঘড়ি তৎপরতার রাজনৈতিক তাৎপর্য, ভারতীয় রাজনীতির গতি-প্রকৃতির খোঁজ রাখা যে কোনো ব্যক্তির পক্ষেই অনুমেয়।
এতদসত্ত্বেও, আলোচনার শুরুতেই ভারতের মোদী সরকার কর্তৃক তড়িঘড়ি করে, ঠিক এই মুহূর্তে এই কালাকানুনগুলো নিয়ে আসার অন্তত দুটো গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রথমত: সবার জানা যে, সারা পৃথিবী এখন এক সম্পূর্ণ অপরিচিত ভয়ংকর মহামারির বিরুদ্ধে লড়ছে। সেই সময় মোদী সরকার চিকিৎসা বিজ্ঞানের শারীরিক বিচ্ছিন্নতার সাবধানবাণীকে আশীর্বাদ বিবেচনা করে, গণ-আতংকের সুযোগ নিয়ে, জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছে। দ্বিতীয়ত: আমেরিকায় ট্রাম্পের পরাজয় এবং বাইডেনের আগমনে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইউরোপসহ আন্তর্জাতিক বহুজাতিক কর্পোরেশনের মধ্যে যে তথাকথিত সমঝোতার আবহ তৈরি হয়েছে – তাকে কাজে লাগিয়ে, বিশেষভাবে চীনের বিরুদ্ধে অব্যাহত বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সংঘাতে ভারতকে কাজে লাগানোর চেষ্টা – যা কিনা ভারতীয় কট্টর দক্ষিণপন্থি বুর্জোয়াদের স্বার্থের সাথে গভীরভাবে সাযুজ্যপূর্ণ। সে কারণেই এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগানোটা ছিল মোদী সরকারের কাছে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মত এক সুবর্ণ সুযোগ।
এই অভূতপূর্ব আন্দোলনের শুরুটা হয়েছিল খানিকটা নীরবেই। বিজেপির কালাকানুন পাসের পার্লামেন্টারি ষড়যন্ত্রের বিরোধিতার সময় ৮ জন এমপির প্রতিবাদ এবং তাদের সদস্যপদ স্থগিতের মধ্যে দিয়ে। আর আজ তা পরিণত হয়েছে এক মহীরুহে। বিজেপি সরকারের “এক দেশ এক আইন” নামক কালাকানুনের প্রত্যুত্তরে কৃষকরা তাদের প্রতিবাদকে “এক দেশ এক লড়াই” আর “এক দেশ এক ধর্মঘট”-এ পরিণত করেছে। এই আন্দোলন হিমাচল থেকে তামিলনাড়ু আর গুজরাট থেকে আসাম পর্যন্ত সারা ভারতের কৃষকসহ শোষিত মানুষকে প্রতিবাদ আন্দোলনে সামিল করেছে। হিমশীতল জল কামানের বর্ষণ, কাঁটাতারের বেড়াজাল অতিক্রমে পুলিশের নির্মম আক্রমণ, শত কর্মী-নেতাদের ধরপাকড়, খোলা আকাশের নীচে রাত্রিযাপন, অস্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশে কৃষক সাথীদের মৃত্যু আর তার সাথে সরকারি মিথ্যা প্রচার, আন্দোলনকে বিভাজন ও দুর্বল করার বহুমুখী প্রচেষ্টা – কোনো কিছুই এই আন্দোলনকে এখনো দুর্বল করতে তো পারেই নি, উপরন্তু শত শত কৃষক সংগঠনের ঐক্য, তার সাথে ট্রেড ইউনিয়নসহ অকৃষি ও অসংগঠিত শোষিত শ্রমিক-পেশাজীবীদের নৈতিক সমর্থন, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রগতিশীল, মানবতাবাদীদের নৈতিক সমর্থন এই আন্দোলনকে এক অভূতপূর্ব মাত্রায় উন্নীত করেছে।
আন্দোলনের পক্ষ এবং বিপক্ষ – উভয়েই আজ কৃষির সংস্কারের কথা বলছেন। বিজেপি সরকার নিজেই পুরানো আইনের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে কৃষি ও কৃষকের উন্নতির দোহাই দিয়েই ভারতের ৬৫ শতাংশ কৃষকের ওপর আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদের নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য নিও-লিবারেল কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষাকারী কালাকানুন প্রতিষ্ঠিত করছে।
অন্যদিকে, সংগ্রামরত কৃষক আর তার মিত্ররা বলছে, গৃহীত আইন হচ্ছে আম্বানি-আদভানিসহ বৃহৎ কর্পোরেশনের কাছে ভারতের কৃষি ব্যবস্থাকে বিক্রির দলিল। এই তিন দলিলের বাস্তবায়ন প্রথমত: ভারতের কৃষির গণ-বণ্টন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করবে, দ্বিতীয়ত: কৃষকরা কৃষিপণ্যের প্রচলিত নিম্নতম সহায়ক মূল্য হারাবে আর চূড়ান্তভাবে: বৃহৎ কর্পোরেট পুঁজির দাসে পরিণত করে কৃষক সমাজের বৃহৎ অংশকে দ্রুত গ্রামীণ সর্বহারায় পরিণত করবে।
এটা বলাই বাহুল্য যে, চলমান এই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি কীভাবে ঘটবে তা আন্দোলনের নেতৃত্ব, শ্রমিক শ্রেণিসহ অন্যান্য শোষিত মানুষের সমর্থন এবং প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির সামগ্রিক প্রস্তুতি ও ক্ষমতার ওপরই নির্ভর করছে। কিন্তু একথা নিশ্চিত যে, এই আন্দোলনের বড়-কর্পোরেট পুঁজিবাদ (যা কিনা সাম্রাজ্যবাদের দোসর) বিরোধী চরিত্র এবং ধর্ম-বর্ণ-জাতি-আঞ্চলিকতা তথা বিভেদের রাজনীতিবিরোধী গণতান্ত্রিক চরিত্র এই আন্দোলনকে যে বিপ্লবী অভিমুখীনতা প্রদান করেছে- তা শুধুমাত্র ভারত নয়, উপমহাদের সকল আন্দোলন ও মুক্তিকামী শোষিত মানুষের শিক্ষা ও অনুপ্রেরণার মাইলফলক হয়ে থাকবে।
সেদিক থেকে, ভারতের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে, আমাদের দেশের কৃষি ও কৃষকের অর্থনৈতিক বাস্তবতার বিচারে এ আন্দোলনের সাধারণ শিক্ষাগুলিকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। আমার ধারণা, আমাদের কমরেডরা যারা কৃষি আন্দোলনের সাথে যুক্ত, তারাই এ আলোচনাকে আরো গভীরে নিয়ে যাবার উদ্যোগ নেবেন। তবে কয়েকটি সাধারণ দিক এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে :
(এক) ভারতের কৃষক সমাজ, ধনিকশ্রেণির বৃহৎ কর্পোরেশনমুখী গণবিরোধী নীতিকে রুখতে, জনগণের অংশগ্রহণভিত্তিক, অন্যান্য শোষিত শ্রেণির সহযোগিতায় এক নতুন ধরনের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাহসী আর অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
পৃথিবীব্যাপী সাম্রাজ্যবাদ আর বহুজাতিক কর্পোরেশনসমূহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ মজবুত করতে, পুঁজির পুঞ্জীভবন অব্যাহত রাখতে, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার সকল ক্ষেত্রে মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে নুতন নুতন কালাকানুন একেবারেই নতুন কিছু নয়। আমাদের দেশেও সরকারের সাম্প্রতিক কৃষি ও পাটকল-চিনিকল সংক্রান্ত উদ্যোগে একই নীতির প্রতিফলন ঘটছে। সুতরাং এসব নীতির বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে এই আন্দোলনের শিক্ষাকে সৃজনশীলভাবে কাজে লাগাতে হবে।
(দুই) এই আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও শিক্ষা হলো, শোষিত মানুষের বিভাজনকে চিরস্থায়ী করতে ধনিক শ্রেণি কর্তৃক ব্যবহৃত পশ্চাৎপদ সামন্তযুগীয় ধ্যান-ধারণার ওপর প্রচণ্ড আঘাত এবং জনতার ঐক্যের প্রতিস্থাপন। “আমরা কৃষক, কৃষিই আমাদের ধর্ম”, “জয় কৃষক, কৃষক একতা জিন্দাবাদ” ইত্যাদি স্লোগান প্রকৃত অর্থেই জাতপাত-ধর্ম-আঞ্চলিকতার সামাজিক বিষবাস্প থেকে সাধারণ মানুষকে শিক্ষিত করে তুলেছে।
(তিন) যে কোনো শ্রেণি এবং পেশাজীবী মেহনতি মানুষের সংগঠন, তার নেতৃত্বের চরিত্রের ওপরই ওই আন্দোলনের পরিণতি নির্ভর করে। ভারতের চলমান কৃষক আন্দোলনে অংশগ্রহণরত সাধারণ সদস্যদের নিজস্ব দাবির প্রতি দৃঢ়তা এই আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ করছে। তাদের এই দৃঢ়তাই একদিকে অন্যান্য মিত্র শক্তিকে কাছে টানতে এবং অন্যদিকে অকালি দলসহ অন্যান্য বেশকিছু বিজেপি মিত্রকে সরকারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করেছে। একইসাথে, বুদ্ধিজীবীদের সরকারি খেতাব প্রত্যাখ্যান, শিল্পীদের কোটি কোটি টাকা আন্দোলন তহবিলে দানের ঘোষণা, বিভিন্ন অংশের মানুষের আন্দোলনের সমর্থনে এগিয়ে আসা, আন্দোলনের শক্তির সৃজনশীল গণসংস্কৃতির উত্থান – কৃষকদের অনুনয়-বিনয় নয় বরং আন্দোলনের যৌক্তিকতা আর তীব্রতা দিয়েই অর্জিত হয়েছে।
তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, আন্দোলনের নেতৃত্বে অগ্রগামী রাজনৈতিক চিন্তকদের অবস্থানই যে কোনো আন্দোলনের চূড়ান্ত ফলাফলকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবিত করতে পারে।
উপসংহার নয়, প্রাসঙ্গিক কথকতা: ভারতের কৃষক আন্দোলনের ব্যাপকতায় সংগত কারণে আমাদের দেশের বাম-প্রগতিশীল আন্দোলনের সাথে যুক্ত নেতাকর্মীরাও বেশ উদ্দীপ্ত হয়েছেন। কয়েকজন কমরেড তো এধরণের আন্দোলন করতে না পারার জন্য বেশ হতাশাও ব্যক্ত করেছেন। আমাদের ভেতরকার এই উদ্দীপনা এবং হতাশা সামনে রেখেই কিছু জানা কথার পুনরুল্লেখ গুরুত্বপূর্ণ বোধ করছি।
আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশসমূহের কমিউনিস্ট আন্দোলন, রাজতন্ত্র বা সামরিক-বেসামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম পরিচালনার দক্ষতা এবং অগ্রগতির স্বাক্ষর রেখেছে। কিন্তু শক্ত বা ভঙ্গুর যে কোনো ধরনের পার্লামেন্টারি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কমিউনিস্ট আন্দোলনেই তীব্রতা, অগ্রগতি সেই বিচারে খুবই অপ্রতুল এবং ধীর গতিসম্পন্ন। উপরন্তু, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বুর্জোয়াদের নিও-লিবারেল পলিসি বাস্তবায়নের রাজনৈতিক সমঝোতার কারণে উন্নয়নশীল দেশের বুর্জোয়ারা একপ্রকার ব্যতিক্রমহীনভাবে পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের কাটছাঁট করে “ফ্যাসিবাদী কতৃত্ব” স্থাপন করছে। যা কিনা এই পরিস্থিতিকে আরো জটিল ও কঠিন করে তুলেছে। বলাই বাহুল্য যে, আমাদের দেশের সরকার আর শাসন ব্যবস্থা এর একটি আদর্শ দৃষ্টান্ত।
এই পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের সামনে একটি নিবেদিত-সচেতন-অগ্রগামীদের পার্টিকে একটি গণভিত্তিক পার্টির চরিত্র অর্জনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আর এটা বলা সম্ভবত অতিশয়োক্তি হবে না যে, এই চ্যালেঞ্জের বাস্তবসম্মত ও সৃজনশীল জবাব এবং তা বাস্তবায়নের একনিষ্ঠ উদ্যোগের মধ্যেই নিহিত আছে আমাদের কাক্সিক্ষত অগ্রগতির চাবিকাঠি।
মনে রাখতে হবে, “নতুন বাস্তবতা” আর “নতুন চিন্তার” দোহাই দিয়ে কোনো দূরবর্তী পন্থায়, সোস্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে কিংবা প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর মত ঘটনার পেছনে ছুটে আর নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ অথবা ঘটনার প্রতিক্রিয়া প্রকাশের অব্যাহত ব্যস্ততায় নিজেদের আবদ্ধ রেখে আমাদের রক্ত-ঘামে গড়া শ্রেণি-গণ-পেশাজীবী সংগঠনগুলিকে শক্তিশালী এবং কমিউনিস্ট পার্টিকে একটি গণভিত্তিক পার্টিতে পরিণত করা যাবে না।
বরং আমাদের ফিরে যেতে হবে আমাদের গৌরবময় অতীতের মৌলিক শিক্ষায়। যেখানে আমরা দেখি, শ্রেণি-সংগ্রামের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ আমাদের পূর্বসূরিরা, ত্যাগ-তিতিক্ষা-আদর্শ আর বিপ্লবী সাহস নিয়ে, শ্রমিক এবং কৃষক অঞ্চলে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে কিভাবে হাতে-কলমে গড়ে তুলেছিলেন ঐতিহাসিক সব আন্দোলন আর তার নেতৃত্ব দেয়ার উপযুক্ত শ্রেণি-গণ সংগঠন।
এই শিক্ষা সামনে রেখেই বাংলাদেশের কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের শ্রেণি-পেশাসহ এবং লোকাল-পার্শিয়াল আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। তৈরি করতে হবে অসংখ্য স্থানীয় সংগঠক ও নেতা। যারা কিনা সেই সংগ্রামকে একবিংশ-শতাব্দির সমাজতন্ত্র অভিমুখী বিপ্লবী রূপান্তরের সংগ্রামের সাথে যুক্ত করতে অগ্রগামীর ভূমিকা পালন করবে। আমাদের মুক্তমনে ভেবে দেখতে হবে যে, আমাদের শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-যুব-নারীসহ অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠনগুলির নেতৃত্ব কি আমাদের দেশের সাম্রাজ্যবাদনির্ভর অধঃপতিত বুর্জোয়াদের প্রভাব মুক্ত হয়ে স্বাধীন-সংগ্রামী ভূমিকা পালনে সক্ষম? আমাদের শ্রেণি-গণ সংগঠনগুলির বৈশিষ্ট্য কি বুর্জোয়াদের পুতুল সংগঠনগুলির সাথে তার পার্থক্য দৃশ্যমান করতে পারছে? আমাদের সংগঠনগুলি কি শ্রেণি পেশার মানুষদের নেতৃত্ব তুলে আনতে পারছে?
আমাদের দেশের বাম-প্রগতিশীল শ্রমিক ও পেশাজীবীদের আন্দোলনে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদ তথা সাম্রাজ্যবাদীদের পরিকল্পনায় গড়ে তোলা এনজিও মডেলের প্রভাব লক্ষ্যণীয়। শ্রেণি সংগ্রাম, শ্রেণি সংগঠন ও আন্দোলন গড়ে তোলার সংগ্রামে, আমাদের দেশে এনজিওগুলোর ভূমিকা চূড়ান্ত বিচারে আমাদের লক্ষ্যের সাথে মূলগতভাবে সাংঘর্ষিক। কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এনজিওগুলোর সংস্কারমুখী কাজের প্রেক্ষিতে তাকে “ব্যবহারের” নামে তার নিয়ন্ত্রণে নিপতিত হয়ে, শ্রেণি সংগ্রামের চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের বদলে সুবিধাবাদের গহ্বরে আটকে যাওয়ার বিপদ সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকা বাঞ্ছনীয়।
আমার বিশ্বাস, আমরা যদি আমাদের শ্রেণি-গণ সংগঠনগুলিকে শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে যুক্ত করতে সক্ষম হই, যদি শ্রেণি-পেশার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রধান জাতীয় এবং লোকাল দাবিগুলোকে সুনির্দিষ্ট করতে পারি, যদি সুনির্দিষ্ট দাবির, সুনির্দিষ্ট স্লোগান মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারি, যদি সুবিধাবাদকে পরাজিত করে স্বাধীনভাবে শ্রেণিনির্ভর সাহস নিয়ে দাঁড়াতে পারি, যদি শ্রমিক-মেহনতি মানুষকে ঐক্যের পতাকাতলে নিয়ে আসার লাগাতার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে পারি- তবে ভারতের কৃষক আন্দোলনের অনুরূপ ঘটনা বাংলাদেশেও সংঘঠিত হওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
লেখক : সভাপতি, সিপিবি, কানাডা।