সাহিত্য শিল্প সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘কালি ও কলম’ এর সম্পাদক; সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা, কবি ও সম্পাদক আবুল হাসনাত মৃত্যুবরণ করেছেন।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আজ (১ নভেম্বর) রোববার সকাল ৮টায় ধানমণ্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় বলে ছায়ানটের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা অনিন্দ্য রহমান জানান।
এদিকে কবি ও সম্পাদক আবুল হাসনাতের মৃত্যুতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, আবুল হাসনাত এদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলা এবং ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, স্বৈরাচার-সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন, সর্বোপরি সমাজপ্রগতির লড়াইয়ে তিনি সব সময় সামনের কাতারে ছিলেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আবুল হাসনাতের মৃত্যুতে দেশ একজন পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক ও সমাজপ্রগতির লড়াইয়ের যোদ্ধাকে হারালো। তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ প্রয়াতের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
আবুল হাসনাতের স্ত্রী নাসিমুন আরা হক সাংবাদিক। তিনি বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি। তাঁদের একমাত্র মেয়ের নাম দিঠি হাসনাত। তিনি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আবুল হাসনাতের মরদেহ হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়া হবে। বেলা আড়াইটার দিকে তাঁর মরদেহ ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে বেঙ্গল গ্যালারিতে নেওয়া হবে। বাদ আসর ধানমন্ডির ৭ নম্বর মসজিদে আবুল হাসনাতের জানাজা হবে। পরে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হবে।
কবিতা, উপন্যাস, চিত্র-সমালোচনাসহ সাহিত্যের নানা বিভাগে পদচ্ছাপ রেখেছেন আবুল হাসনাত। তিনি পরিচিতি লাভ করেছেন একজন বিচক্ষণ ও সংবেদনশীল সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে।
দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকী দীর্ঘদিন তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয়েছে।
আবুল হাসনাত ছায়ানটের অন্যতম সংগঠক ও সদস্য ছিলেন। তিনি ছায়ানটের কার্যকরী সংসদের সাবেক সহসভাপতি। তাঁর মৃত্যুতে সভাপতি সন্জীদা খাতুনসহ শোক জানিয়েছে ছায়ানট।
উল্লেখ্য, আবুল হাসনাত ১৯৪৫ সালের ১৭ জুলাই পুরান ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। সাহিত্যে তার ছদ্মনাম ছিল মাহমুদ আল জামান।
‘জ্যোৎস্না ও দুর্বিপাক, ‘কোনো একদিন ভুবনডাঙায়’, ‘ভুবনডাঙার মেঘ ও নধর কালো বেড়াল’ আবুল হাসনাতের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।
তার প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে সতীনাথ, মানিক, রবিশঙ্কর ও অন্যান্য ও জয়নুল, কামরুল, সফিউদ্দীন ও অন্যান্য।
শিশু ও কিশোরদের জন্য তিনি লিখেছেন ‘ইস্টিমার সিটি দিয়ে যায়’, ‘টুকু ও সমুদ্রের গল্প’, ‘যুদ্ধদিনের ধূসর দুপুরে’, ‘রানুর দুঃখ-ভালোবাসা’।
দীর্ঘ ২৪ বছর দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সাময়িকী সম্পাদনা করা আবুল হাসনাত আমৃত্যু কালি ও কলমের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। পাশাপাশি চিত্রকলা বিষয়ক ত্রৈমাসিক ‘শিল্প ও শিল্পী’রও তিনি সম্পাদক ছিলেন।
১৯৮২ সালে ‘টুকু ও সমুদ্রের গল্প’ র জন্য আবুল হাসনাত অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার পান। ২০১৪ সালে তিনি বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলো মনোনীত হন।