প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন এবং পুরো রচনাটি আগাগোড়া স্থূল মিথ্যা প্রপাগান্ডা বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ, মানস চৌধুরী ও প্রাক্তন শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের চেষ্টাকারী আশরাফুল আলম খোকনকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ৭ অক্টোবর, ২০২০ তারিখে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনলাইন সংস্করণে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব জনাব আশরাফুল আলম খোকনের “ধর্ষণের সেঞ্চুরি, একটি গুজবের আত্মকাহিনী!” শীর্ষক একটি লেখা প্রকাশিত হলে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ তিন শিক্ষক ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠণটি।
ছাত্র ইউনিয়নের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মনগড়া, মিথ্যা, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের উপর ভিত্তি করে ৬৭২ শব্দের এই লেখায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে জাতির সামনে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।”
অন্যদিকে ওই তিন শিক্ষকের বক্তব্য অনুযায়ী, “জনাব খোকনের রচনাটি আগাগোড়া স্থূল মিথ্যা প্রপাগান্ডাতে ভরা, ১৯৯৮ সালের ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকালীন অধিকাংশ জাতীয় দৈনিকের খবরাখবর দেখলেই যার প্রমাণ মিলবে। এই মিথ্যাচার করতে গিয়ে তিনি আমাদের নামেও কুৎসা রটিয়েছেন।”
তারা আরও জানিয়েছেন যে, “দেশব্যাপী যখন ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে তখন ২২ বছর আগের ইতিহাসকে মনগড়া তিনি কেন লিখতে বসেছেন তা দেশবাসীর মতো আমরাও বুঝতে পারছি। আমরা অবাক হব না যদি ১০ বছর পর তিনি ইতিহাস লিখতে বসেন যে বেগমগঞ্জে কিছু ঘটেনি, কিংবা মুরালি চন্দ্র কলেজের ঘটনাটিও তাঁর দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। জনাব খোকন অত্যন্ত ক্ষমতাবান পদে আছেন, তাঁর এই ধরনের ফেসবুক স্ট্যাটাসের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আমরা বুঝতে পারি।”
ছাত্র ইউনিয়ন, জাবি সংসদও তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে বলেন, “ধর্ষক জসিম উদ্দিন মানিকের ভিন্ন রাজনৈতিক চরিত্রের অবতারণা করে আশরাফুল আলম খোকন আসলে চেষ্টা করেছেন এরূপ অপরাধের সাথে ক্ষমতার সম্পর্ককে অস্বীকার করতে। যখনই সরকারি দল কিংবা তার বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী কর্তৃক একের পর এক অপরাধ সংঘটিত করবার অভিযোগ আসতে থাকে, তখনই এধরণের কুযুক্তির ফুলঝুরি ছুটাতে রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে দলান্ধ চাটুকার ও নব্য দালাল সকলে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সারাদেশ যখন উত্তাল, তখন অতীতের ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নিয়ে মনগড়া তথ্য ছড়িয়ে চলমান আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা ছাড়া এই লেখা আর কিছুই নয়।”
এছাড়াও বিবৃতিদানকারী ওই তিন শিক্ষক নিবন্ধটি প্রকাশকারী ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ পত্রিকার উদ্দেশ্যে আহ্বান রেখে বলেন যে, “আমরা আহবান জানাই যে সাংবাদিকতার চর্চায় আপনারা আরো দায়িত্বশীলতা আনুন, পরিচিত সামাজিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে হঠকারী ভূমিকা পরিহার করুন, এবং ব্যক্তিগত কুৎসা সম্প্রচার বন্ধ করুন। আপনাদের এই ভূমিকা সাংবাদিকতাকে কলঙ্কিত করবে কেবল।”