ব্যর্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ডিজির অপসারণ, দূর্নীতিবাজদের গ্রেফতার ও বিচার এবং বিনামূল্যে করোনা চিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে কফিন মিছিল করেছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে মিছিল সহকারে শাহবাগে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দিলে পরে সেখানেই সমাবেশ করে ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীরা।
প্রগতিশীল ছাত্র জোট সমন্বয়ক রাশেদ শাহারিয়ার সভাপতিত্বে ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সালমান সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন প্রিন্স ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি আল কাদেরী জয়।
সমাবেশে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, সারাবিশ্ব আজ থমকে গিয়েছে মারণ ভাইরাস করোনার ভয়াল থাবার কারণে। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে মৃত্যু বরণ করছে হাজার হাজার মানুষ। এই সংকটময় সময়ে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্হার গাফিলতি, দূর্নীতি ও লুটপাট দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। চিকিৎসা জন্য এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছে মানুষ। চিকিৎসা না পেয়ে রাস্তায় মৃত্যুবরণ করছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংকটকালীন মূহূর্ত কে কাজে লাগিয়ে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা অক্সিজেন ও ঔষধের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছেন। যা নিয়ন্ত্রণে সরকারি কোন হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। উল্টো আমরা দেখলাম করোনা মোকাবেলায় যারা সম্মুখ সারির যোদ্ধা তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী নিশ্চিত না করে দেশের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা সামগ্রী রপ্তানিতে সহযোগীতা করেছে।
তারা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। যে যেভাবে পারছে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ লুটেপুটে খাওয়ার ধান্ধায় আছে। হাসপাতালের পরিচালক ও ডাক্তারদের দলবাজি, কমিশন বাণিজ্য এবং দুর্নীতির কারণে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।
সরকারি হাসপাতাল গুলোতে যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করে দুর্নীতিবাজদের শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
তারা বলেন, সরকারের স্বাস্থ্য খাতে অব্যবস্থাপনাসহ অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জড়িয়ে প্রতিবাদকারীদের জেলে পোরা হচ্ছে এবং মুক্তবাক, মুক্তচিন্তা ও গণতান্ত্রিক মত প্রকাশের অধিকার হরণ করা হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, দুর্নীতিবাজ আমলা-কর্মকর্তা ও তাবেদারি নেতা কর্মীদের বহাল তবিয়তে রেখে কর্মহীন করা হচ্ছে মেহনতি শ্রমিকদের। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের নানা লুটপাট ও চরম ব্যর্থতার চিত্র উন্মোচিত হয়ে গেছে। এই সরকার সাধারণ মানুষের স্বার্থের চেয়ে ব্যবসায়ী ধনীক শ্রেণির স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমানে অনেকেই চাকুরী হারাচ্ছেন এমনকি অনেকের বেতনও কমিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। আর এরই মাঝে সাধারণ মানুষের কথা না ভেবেই ঘোষণা দিয়ে কার্যকর করা হলো- করোনা টেষ্ট করাতে হলে ২০০ টাকা ও বাসায় গিয়ে টেষ্ট করালে ৫০০ টাকা গুনতে হবে। যা রীতিমতো অমানবিক।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, এই মহামারীতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টিউশন ফি পরিশোধ করার কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষুদে বার্তা ও নোটিশ পাঠাচ্ছে। যেখানে পরিবার গুলোর উপার্জনক্ষম ব্যাক্তিরা চাকুরী হারাচ্ছে কিংবা বেতন কমে গিয়েছে সে সময় এহেন আচরণ চূড়ান্ত পর্যায়ে অমানবিকতার সামিল। তাই বর্তমান পরিস্হিতি বিবেচনা করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি মওকুফ করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ইতোমধ্যে বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাসের কথা বলছে। আমরা সকলেই জানি বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্কের কি অবস্থা। মফস্বল শহর গুলোতে যেখানে ঠিকমতো কথা বলার জন্য নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। সেখানে অনলাইন ক্লাস আশাতীত ব্যাপার। আর মোবাইল নেটওয়ার্ক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যে মূল্যের বিনিময়ে যে পরিমান সেবা সরবরাহ করে তা অতি নগন্য। তাই শিক্ষার্থীদের কাছে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত এহেন সিদ্ধান্ত বর্তমান পরিস্থিতির সাথে সাংঘর্ষিক।