সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানিয়ে শাহবাগে নাগরিক বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল (২০ অক্টোবর) বুধবার বিকাল ৪ টায় ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ এর আয়োজনে শাহবাগে নাগরিক বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মসুচির আয়োজনের সাথে যুক্ত ছিলেন প্রগতিশীল বাম ছাত্রসংগঠন, সাংস্কৃতিকর্মী এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মীবৃন্দ। সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাম গণজান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদ) এর কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী, ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মাহমুদ, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার প্রমুখ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এম এম আকাশ, কাবেরী গায়েন, জোবাইদা নাসরিন এই কর্মসুচির সাথে সংহতি প্রকাশ করেন।
সভায় কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল সেলিম জানান, “মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করেছি। কিন্তু আজ এ সরকারের আমলে ঘরে ঘরে ফুলের বদলে আগুন, হাসির বদলে কান্না”।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশিদ ফিরোজ বামপন্থী আন্দোলনকে প্রগতির পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িকতা এবং কুপমন্ডুকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম বলে বক্তব্য প্রদান করেন। এই আন্দোলনে শরিক হতে তিনি জনগণকে আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপসারণ এবং জড়িতদের শাস্তি চেয়ে ৮ দাবি সম্বলিত ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। ঘোষণাপত্র তে বলা হয় যে, দেশের গণমাধ্যমকে টুটি চেপে ধরে, তথ্যপ্রবাহের পথ বন্ধ করে সরকার মূলত একটি স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করেছে। আওয়ামী লীগ নামের ক্ষমতাসীন দলটির কাছে এখন দুটো ভয়ানক অস্ত্র রয়েছে। এক- তার দলের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িক মনস্তত্ব এবং দুই-রাষ্ট্রক্ষমতা। এ দুই অস্ত্রকে ব্যবহার করে তারা প্রমাণ করেছে একাত্তরের পরাজিত সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান থেকেও তারা ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক। আজকের এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এদেশের নাগরিকরা সরকারের কাছে স্পষ্ট বার্তা দিতে চায়, সাম্প্রদায়িকতাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারকারী কোনো দল ও গোষ্ঠীকেই এ দেশ মেনে নেয়নি, আজও নেবে না। সাম্প্রদায়িক আক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ এ সরকারকে মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর, মানুষ হত্যা, নিপীড়ন, হিন্দু পল্লীতে অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের দায় নিতে হবে”।
আয়োজন চলাকালীন মশাল মিছিলের পূর্বে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী এবং ছাত্র ফেডারেশন কর্মসুচি প্রত্যাখানের ঘোষণা দেয়৷ এই প্রসংগে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবীর জানান যে, “আমরা সাংগঠনিক জায়গা থেকে এই কর্মসুচির সংগে প্রথম থেকেই যুক্ত ছিলাম। শুরু থেকেই গণজাগরণ মঞ্চ এবং নিপীড়ন বিরোধী শাহবাগ সহ এই ধরণের আওয়ামীপুষ্ট গোষ্ঠী যারা সংস্কৃতিগত এবং রাজনৈতিকভাবে বর্তমান ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের কর্মকান্ডকে নানাভাবে জায়েজ করে, তারা যেন এই আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং প্রতিনিধিত্ব না থাকে। কিন্তু আমরা দেখলাম কর্মসুচিতে তাদের প্রতিনিধিকে বক্তৃতা দেওয়া হলো। সেই জন্য দাবির সাথে একমত থাকা স্বত্তেও আমাদেরকে এই কর্মসুচি বর্জন করতে হয়েছে”।
সমাবেশ শেষে একটি মশাল মিছিল শাহবাগ থেকে সায়েন্সল্যাব হয়ে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়।