শোষণ-বঞ্চনা আর হতাশায় কৃষক আত্মহনন করেছে –কৃষক সমিতি
লুটপাটের অর্থব্যবস্থার কারণে কৃষকরা শোষণ-বঞ্চনা আর হতাশার শিকার হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন কৃষক নেতৃবৃন্দ।
আদিবাসী দুই কৃষকের আত্মহননের জন্য দায়ীদের শাস্তি ও বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষি সেচে অব্যবস্থাপনা, হয়রানি-দুর্নীতি, দলীয়করণের প্রতিবাদে এবং কৃষক সমবায়ের মাধ্যমে সেচের পানি বিতরণ চালুর দাবিতে গত (০৬ এপ্রিল), বুধবার বেলা ১২টায় রাজশাহী কোর্ট শহীদ মিনার চত্ত্বরে বাংলাদেশ কৃষক সমিতির এক সমাবেশে কৃষক নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, রাজশাহী জেলা কমিটির আহ্বায়ক বিজন কুমার সরকারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, সহ-সভাপতি নিমাই গাঙ্গুলী, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হোসেন খান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাগিব আহসান মুন্না, কৃষক সমিতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, রাজশাহী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড আপতাফ হোসেন কাজল, চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক কমরেড কামাল হোসেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রেবেকা সরেণ। সমাবেশ সঞ্চালন করেন কৃষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক আবিদ হোসেন।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, গতমাসে বরেন্দ্র প্রকল্পে চরম অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বলি হয়েছেন দু’জন আদিবাসী কৃষক। এরা আত্মহত্যা করেনি, লুটেরা ব্যবস্থা তাদের হত্যা করেছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে নীতিমালা লঙ্ঘন করে সেচের পানি বাবদ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, চাহিদামত সেচের পানি দেওয়া হচ্ছে না। ডিপ টিউবওয়েল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা আছেন তারা অতি মুনাফার লোভে স্কিমের আওতায় পানি বিতরণ ক্ষমতার অতিরিক্ত জমি নিয়েছে, ফলে সাধারণ কৃষকরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও চাহিদামত পানি পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে আদিবাসীরা আরও বেশি বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। রবি মার্ডি ও অভিনাথ মার্ডি বারবার পানি চেয়েও পানি পায়নি, তারা সেচ ব্যবস্থাপককে জানিয়েছিল- ক্ষেতে পানি না দিয়ে তারা কীটনাশক দিতে পারছে না তাই পানির জন্য অনুনয় বিনয় করেছিল কিন্তু পানি পায়নি। তাদের বলা হয়েছিল বিষ ক্ষেতে না দিয়ে খেয়ে ফেলো। মানুষ হিসেবে ন্যুনতম স্বীকৃতি না পেয়ে, অপমানের দুঃখে-ক্ষোভে তারা আত্মহত্যা করেছে।
নেতৃবৃন্দ দায়ীদের বিচার দাবি করেন এবং বরেন্দ্র প্রকল্পে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমনের দাবি করেন, একই সাথে সারাদেশে সরকার নির্ধারিত দামে কৃষকদের সার-বীজ-কীটনাশক ও সেচের জল সরবরাহের দাবি জানান। এছাড়া চলতি বছর উৎপাদন খরচ বিবেচনায় ধানসহ সকল ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত করা, ইউনিয়ন পর্যায়ে বিক্রয়কেন্দ্র চালু, বিএডিসি সচল কৃষক সমিতির দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানায়।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল রাজশাহীর কোর্ট এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
এর আগে গত ০৬ এপ্রিল, সকালে বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেউপাড়ার নিমঘটু আদিবাসী গ্রামে অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি’র বাড়িতে তদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে ঐ পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নিমাই গাঙ্গুলী, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হোসেন খান, সহ-সাধারণ সম্পাদক আবিদ হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাকসু’র সাবেক ভিপি রাগীব আহসান মুন্না।
ঢাকা থেকে সকাল ১০টায় নেতৃবৃন্দ আদিবাসী গ্রামে পৌঁছে নিহত অভিনাথ মার্ডির মাতা সোহাগী সরেন, জামাতা রানা সরেন, রবি মার্ডির ভাই সুশীল মার্ডিসহ নিমঘটু আদিবাসী গ্রামে উপস্থিত লোকজনের সাথে আলোচনা করেন।