শিক্ষার সংকট সমাধানে ছাত্র ইউনিয়নের ৫ দফা দাবি
‘শিক্ষার সংকট সমাধানে আমাদের করণীয়’- শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় শিক্ষার সংকট সমাধানে ৫ দফা উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।
রোববার (১৭ নভেম্বর) বিকাল ৪ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভি আই পি লাউঞ্জে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময়সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন খান, প্রবীণ সাংবাদিক সোহরাব হোসেন, হাইকোর্টের আইনজীবী আইনুল নাহার লিপি এবং বিভিন্ন ছাত্র ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা কর্মী।
সভার শুরুতে লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার সংকট সমাধানে ৫ দফা দাবি উত্থাপন করে সংগঠনটি।
৫ দফা দাবিগুলো-
১. জেলায় জেলায় শিক্ষা বৈষম্য দূর করার লক্ষ্য দেশি বিদেশি কর্পোরেট কোম্পানির লভ্যাংশের উপর সারচার্জ আরোপ করতে হবে।
২.সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পুর্ন স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
৩. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিকল্প পরীক্ষাকেন্দ্র ও শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করতে হবে।
৪. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অভিন্ন টিউশন ফি চালু করতে হবে।
৫. শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে ছাত্র ইউনিয়ন দাবি করে, বহুজাতিক কোম্পানির উপর সারচার্জ আরোপ করলে শিক্ষাখাতে বাজেট বাড়ানো সম্ভব, শিক্ষাখাতে বাজেট বাড়লে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিক্য অনেকাংশে কমবে। শিক্ষাখাতে বাজেট কম থাকায় গবেষণা দূর্বল থেকে আরো দূর্বল হয়ে পড়ছে, সেই সাথে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারিকরণের শিকার হচ্ছে ফলে চালু হচ্ছে বৈকালীন কোর্স।
সভায় এম এম আকাশ বলেন – সরকার মুখে বললেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। সরকার আর্মি এবং পুলিশের পেছনে যে বাজেট বরাদ্দ করছে, সেটা কিছুটা কমিয়ে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ করলে বাজেট সংকট অনেকাংশে কমে যাবে।
এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে তিনি বলেন, স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। দলীয়করণ ও নিরব দর্শকের ভূমিকা থেকে শিক্ষকেরা যদি বের হতে না পারে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষাখাতে শুধু বাজেট বাড়ালেই হবে না বাজেটের ব্যায় কোথায় হবে কিভাবে হবে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে এবং কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, তাহলেই শিক্ষার সামগ্রিক সংকট অনেকাংশে সমাধান হবে।
আইনুল নাহার লিপি বলেন ৪৯ বছরেও সরকারি উদ্যোগে কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলেনি, গুটি কয়েক বিদ্যালয় থাকলেও অধিকাংশই এখন বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন শিক্ষা মানুষের জন্মগত অধিকার। প্রত্যেক নাগরিকের বিনামূল্যে শিক্ষা গ্রহনের অধিকার রয়েছে, যা সরকার দিতে বাধ্য। তিনি আরো বলেন ছাত্র ইউনিয়নের ৫ দফা দাবীর সাথে, একমূখি শিক্ষা ব্যাবস্থা প্রণয়নের দাবী সংযুক্ত করতে হবে, অন্যথায় সংকট সম্পুর্নরূপে সমাধান সম্ভব নয়।
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও প্রবীণ সাংবাদিক সোহরাব হোসেন ছাত্র ইউনিয়নের উত্থাপিত ৫ দফা দাবিকে কারিগরি দাবি উল্লেখ্য করে বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যাবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে।
তানজীম উদ্দীন খান ছাত্র ইউনিয়নের ৫ দফাকে সমর্থন করে বলেন, জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেও সংকট সমাধান করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষক।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল বলেন, শিক্ষা সংকট সমাধানে ছাত্র ইউনিয়ন অতীতের মতো করে আগামী দিনে সকল ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করবে।