শাবিপ্রবির উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে জাবির পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর বিবৃতি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে শাবিপ্রবি’র উপাচার্যের বিদ্বেষমূলক, অবমাননাকর ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ায় উপাচার্যের পদত্যাগ ও ক্ষমাপ্রার্থনার দাবিতে জাবির বর্তমান ও সাবেক পাঁচ শতাধিক নারী শিক্ষার্থীবৃন্দের বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে শাবিপ্রবি’র উপাচার্য ফরিদ উদ্দীন আহমেদের এই নারী বিদ্বেষী বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানায় এই শিক্ষার্থীবৃন্দ।
একইসাথে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চলমান যৌক্তিক আন্দোলনের সাথে সংহতি এবং একাত্মতা পোষণ করে অনতিবিলম্বে ফরিদ উদ্দীন আহমেদকে উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ দাবি করেন তারা।
শিক্ষার্থীবৃন্দ তার বক্তব্যের জন্য জনসম্মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করার দাবি জানান। পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরণের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে তাকে বর্জন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি একটি ফাঁসকৃত কল রেকর্ডে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের রাত দশটার পর হলের বাইরে থাকার কথা উল্লেখ করে নারীর জন্য অমর্যাদাকর এবং অবমানাকর মন্তব্য করতে শোনা যায়। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এরকম নারী-বিদ্বেষী বক্তব্য নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় এবং ন্যক্কারজনক। তার এই মন্তব্য শুধু জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্রীদেরই নয়, বরং বাংলাদেশের সকল নারীর জন্য অপমানজনক। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে এমন একজন নারীবিদ্বেষী ব্যক্তির অবস্থান স্পষ্টত রাষ্ট্রের ব্যর্থতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক পুরুষতান্ত্রিক চরিত্র উন্মোচন করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে এমন একজন নারীবিদ্বেষী ব্যক্তির নিয়োগ সমাজে নারীর প্রতি বিদ্বেষ, অপ্রাসঙ্গিকভাবে নারীকে কলঙ্কিতকরণ এবং নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণকে বৈধতা দান করে। একজন উপাচার্যের এমন বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
গত বছর সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের যৌন হয়রানিমূলক বক্তব্যসহ আমরা প্রতিনিয়তই প্রশাসনিক-রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী, এমনকি আদালতেও নারীকে নিয়ে নানা ধরণের অবমাননাকর ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করার নজির দেখেছি কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই উক্ত ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়নি। প্রশাসনের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার ফলে এই রাষ্ট্রে নারীদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাই কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এমন ভয়াবহ লিঙ্গবাদী, নারী বিদ্বেষকারী পারিপার্শ্বিকতা কোনো নাগরিকের প্রাপ্য নয়।
শাবিপ্রবি’র উপাচার্য ফরিদ উদ্দীন আহমেদ এর মত পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাধারার মানুষের বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে থাকা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
গত ১৬ জানুয়ারী সেই একই উপাচার্য এবং শাবিপ্রবি প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর পুলিশি আক্রমণ হয়, যা চরম নিন্দনীয় এবং পুরো রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী শিক্ষার্থীবৃন্দ- শরমিন্দ নীলোর্মি, সায়দিয়া গুলরুখ, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, নাসরিন সিরাজ, পারভীন জলী, নাসরিন খন্দকার, প্রাপ্তি তাপসী, ইসাবা শুহরাত, তামান্না নূর তানিয়া, আনমনা প্রিয়দর্শিনী, ইশরাত জামান, মানসুরা সাদিকা, মাহবুবা আলম রিপা, তাসমিয়া কবীর, তামজিদা মোহসিনা তুবা, রাবিয়া বসরী, টুম্পা, এ্যথিনা অরোরা, রুমানা ফেরদৌসী রিসা, ইফফাত আরা আইরিন, সাদিয়া জাফরিন, মালিহা মোস্তফা সূচনা, যারিন তাসনীম, কাবেরী সুলতানা, ফৌজিয়া আহমেদ, আতিয়া ফেরদৌসী, জোবায়দা ফাতেমা, সায়েমা চৌধুরী, শিকোয়া নাজনিন, নাজনিন শিফা, খাদিজা মিতু, জিনাত আরা হক, অনন্যা শিলা শামসুদ্দিন, দিলশাদ সিদ্দিকা, নাহিদ আহমেদ, দিলশানা পারুল, ফাহমিদা হানিফ ইলা, রেবেকা আহমেদ, ফাইজা মেহজাবিন প্রিয়ন্তী, চন্দ্রিকা নূরানী ইরাবতী, ক্যামেলিয়া শারমিন চূড়া, সাদিয়া ইসলাম, নূর-ই-জান্নাত, মাহমুদা রোশনী, সুমাইয়া আক্তারী উর্মি, মালিহা ফাইরুজ ফারিন, জুমাইয়া মাশিয়াত বিনতে শেফায়েত সৃষ্টি, আবিদা মুগনিয়া জিম, তাপস্বী রাবেয়া বসরী, রেজিনা আহমেদ স্বর্ণা, অহনা আনজুম, আনিকা তাসনিম রাহি, সামিয়া ইসলাম, মনীষা হক, রুবাাঈয়াত শারমিন, রাহাত আরা স্বর্ণা, নওরিন রহমান, মোঃ রাফিউল করিম মিয়াদ, সুমাইয়া তাবাসসুম রিচিকা, সাবিহা মৌরিন, বৈশাখী দাশ, ঈশিতা বিনতে শিরিন নজরুল, জেরিন আফরিন, কাজী তানিয়া, লামিয়া জুমানা অর্চি, ফারাহ নাজ ইসলাম ইফতি, লাবনী সিনহা, সানজিদা লুবনা, সাঈদা জাহান, লুফাইয়্যা শাম্মী, খাদিজা আক্তার জুইঁ প্রমুখ।