মে দিবস: শ্রমিকশ্রেণি ও দেশবাসীকে সিপিবির শুভেচ্ছা
মহান মে দিবস উপলক্ষে দেশ ও সারাবিশ্বের শ্রমিকশ্রেণি, শ্রমজীবী মানুষসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। একইসাথে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ও শ্রম-অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয় সিপিবির পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স আজ (৩০ এপ্রিল ২০২৩) প্রদত্ত এক বিবৃতিতে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন ও শ্রমিক মেহনতি মানুষের মুক্তির আন্দোলন বেগবান করতে সচেতন মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সিপিবি মহান মে দিবস উপলক্ষে সিপিবির পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র নেতা-কর্মীরা সকাল সাড়ে ৮টায় কমরেড মণি সিংহ সড়কের মুক্তিভবনস্থ পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং শ্রমিক সমাবেশে অংশগ্রহণ করে সংহতি জানাবেন বলে জানা গেছে।
এছাড়াও মহান মে দিবসে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় নানাবিধ কর্মসূচি পালিত হবে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার এবং বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রীয় মালিকানার নীতিতে দেশ পরিচালনার কথা থাকলেও লুটেরা পুঁজিপতিরা বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতা ব্যাবহার করে রাষ্ট্রীয় কল-কারখানাকে বন্ধ করছে। দ্বিরাষ্ট্রীয়করণের নামে অবাধ লুটপাট অব্যাহত রাখছে। ব্যক্তি-মালিকানার নামে অনেক ক্ষেত্রে শ্রমজীবী মানুষের ওপর শোষণের মাত্রা বৃদ্ধি করে লুটপাটের নতুন ধারা তৈরি করার হচ্ছে। শ্রমিকদের জীবনে চরম সংকট সৃষ্টি করে নব্য-ধনিক-গোষ্ঠীকে আরও ধনী করে শোষণ বৈষম্য বৃদ্ধি করছে। শ্রমজীবী মানুষের ওপর শুধু শোষণ নয়, তার যতটুকু শ্রমঅধিকার আছে তা দিনদিন খর্ব করার চেষ্টা চলছে।
এমতাবস্থায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই শ্রমিক-মেহনতি মানুষকে তার অধিকার আদায় করতে হবে উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ও পরিপূর্ণ শ্রমঅধিকার বাস্তবায়ন হয়নি। জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ও শ্রমঅধিকার প্রতিষ্ঠা এবং শোষণ-মুক্তির সংগ্রাম এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, মে দিবসের বিপ্লবী প্রেরণায় শ্রমজীবী মেহনতি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। শোষণমুক্তির সংগ্রাম অগ্রসর করতে হবে। মহান মে দিবসে নতুন করে শপথ নিয়ে শ্রমিকশ্রেণিকে সব ধরনের শোষণ-নির্যাতন-নীপিড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ তীব্র সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে এখনো শ্রমআইন প্রতিষ্ঠা করা হয়নি বরং শ্রমিকের গণতান্ত্রিক অধিকার ধ্বংস করতে নতুন নতুন আইন করা হচ্ছে।
দেশের শ্রমআইনে শ্রমিকদের যতটুকু অধিকার দেয়া আছে, ততটুকুও প্রতিষ্ঠা করা হয়নি, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেয়া হয়না জানিয়ে বিবৃতিতে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকার দাবি জানানো হয়। আরও বলা হয়, সকল সেক্টরে মানবিক জীবনযাপন উপযোগী ন্যূনতম মজুরি দিতে হবে। রেশনিং, বাসস্থান ও শিক্ষা-স্বাস্থ্যের সুরক্ষা দিতে হবে। পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করাসহ সংবিধান এবং আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী শ্রমআইন-বিধি সংশোধন ও কার্যকর করতে হবে, শ্রমিকদের জন্য স্থায়ী রেশন ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, রানা প্লাজা, সেজান জুস কারখানা অগ্নিকা-সহ মালিকশ্রেণির অবহেলাজনিত বিভিন্ন ঘটনায় নিহত-আহত শ্রমিকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, দায়ী সকল মালিকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। ছাঁটাই, হামলা-মামলা-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। বিবৃতিতে এসব দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান হয়।