‘প্রহসনের’ মার্কিনী গণতন্ত্র বনাম ‘জনগণের’ চীনা গণতন্ত্র
বিপ্লব রঞ্জন সাহা
ব্যাপক তথ্যের ভিত্তিতে একথা বলাই যায় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র প্রহসনের ছাড়া কিছু নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘গণতন্ত্রের জন্য প্রথম শীর্ষ সম্মেলন’ সংঘটিত হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ চারশত দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সারা দুনিয়ার সামনে গণতন্ত্রের ঠিক কি প্রতিবেদন বা চিত্র তুলে ধরেছে? সে বিষয়টি জরিপ অনুপাতে বিবেচনা করার প্রয়াস নেওয়া যেতে পারে।
‘আমেরিকান গণতন্ত্র’ বিষয়ক প্রায় ১.৪ মিলিয়ন (১,৪০১০৬৯) প্রতিবেদন থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে দেখা গেছে যে সে-সবে আমেরিকার গণতন্ত্র বিষয় কয়েকটি তীক্ষ্ম সমালোচনা উপস্থাপিত হয়েছে।
বিশ্ব
গণতন্ত্রের মুখোশ পরিধান করে ‘পেলোসির তাইওয়ান সফর’ অত্যন্ত উত্তপ্ত বিতর্ককে উস্কে দিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান প্রসঙ্গটিকে ব্যবহার করার অপচেষ্টা করছে মূলত চীনের শান্তি ও সমৃদ্ধিকে বারবার খাটো করে দেখানোর হীন উদ্দেশ্য নিয়ে।
যাহোক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যা প্রত্যাশিত ছিল তার বিপরীতে সারা পৃথিবীর সংবাদ মাধ্যমে এই সফরটিকে একটি বোকামিপূর্ণ ‘রাজনৈতিক স্টান্ট’ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
‘এই রাজনৈতিক প্রদর্শনী’র পরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচন সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে-গণতন্ত্রের আরেক প্রদর্শনী হিসেবে।
প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে যে ২০২২ সালের অন্তর্বর্তীকালীন নিবাচনের মোট ব্যয় ১৬.৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এটাই বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচন যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যসমূহের সত্যিকারের বাস্তবতা: সহিষ্ণু রাজনীতি, ভঙ্গুর সমাজ ও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির বাস্তব চিত্র।
মোটের উপর গণতন্ত্রের প্রথম শীর্ষ সম্মেলনের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বকে গণতন্ত্রের ভালো কেন প্রতীতি দেখাতে পারেনি।
তারপর দেখা যাক বিভিন্ন মহাদেশের বিভিন্ন দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র বিষয়ে ঠিক কী মনোভাব পোষণ করে?
আমেরিকার অপরাপর দেশসমূহ
গণতন্ত্রের জন্য শীর্ষ সম্মেলন আমেরিকার অপরাপর দেশসমূহের জন্য গভীর চিন্তার উদ্রেক করেছিল।
এই অজুহাতে যে উল্লেখিত দেশসমূহ ‘অগণতান্ত্রিক’। এরই সুত্র ধরে তিনি বলেন এই দেশগুলোকে বাদ রেখে আমেরিকার দেশসমূহের কোন শীর্ষ সম্মেলন হতেই পারে না।
এটি বাস্তবে আমেরিকার দেশসমূহের কোন শীর্ষ সম্মেলন নয় বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের একটি সম্মেলন।
এশিয়া
এশিয়ার দিকে দৃষ্টি ফিরালে দেখা যায় এশিয়ায় বাইডেনের প্রথম সফর সকলের নজর কাড়ে এবং তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।
এশিয়ার দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঠেলে দেওয়া ক্ষুদ্র আল যথারীতি অনিবার্যতা নিয়েই রয়ে গেছে-এবং এই প্রসঙ্গে উঠে এসেছে কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্রবিষয়ক প্রসঙ্গ। উক্ত সফরে বাইডেন ইন্দো প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (আইপিইএফ) গঠনের ঘোষণা দেন এবং কোয়াড্রিলেটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগে (কোয়াড) অংশগ্রহণ করেন।
বাইডেনে অন্তর্গত আচরণ সকলকে দেখিয়ে দিয়েছে যে তিনি এশিয়ায় তার মিত্রদেরকে সকলের সামনে তুলে ধরতে এবং চীনকে মোকাবেলা করার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে বুঝিয়ে দিতে উদগ্রীব।
যাহোক, বাইডেনের প্রথম এশিয়া সফরের এসব প্রসঙ্গকে ছাপিয়ে গেছে নাগরিক অসন্তোষ। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে সাধারণ মানুষের বিশাল বিশাল মিছিল থেকে তার এই সফরের বিরোধিতা করা হয়েছে। কারণ এটি এশিয়ান উত্তেজনা ছড়াতে ভূমিকা রাখবে।
ইউরোপ
ইউরোপে ন্যাটো, জি-৭ এবং ইইউ শীর্ষ সম্মেলন দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। এসব শীর্ষ সম্মেলনসমূহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদেরকে রাশিয়া-ইউক্রেইন দ্বন্দ্বে পক্ষাবলম্বনের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বাধ্য করে। এই নিষেধাজ্ঞা ইউরোপের জ্বালানি সংকটকে তীব্রতর করে।
যদিও ইউরোপের জ্বালানি সংকট মোকাবেলা করতে ১৫ বিলিয়ন তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস প্রেরণের অঙ্গীকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করেছে, কিন্তু তা প্রতি বছর রাশিয়া প্রদত্ত মোট জ্বালানির দশ ভাগের এক ভাগ পরিমাণও নয় আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাজার দরের চেয়ে অনেক অনেক বেশী দাম নেয় যা ইউরোপিয়ানদের জন্য কষ্টেরও ব্যাপার।
আর ফলাফলটা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিপুল মুনাফা লুটে নিচ্ছে যখন তার মিত্ররা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই নিজেদেরকে গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন বলে মনে করে অথচ বাস্তবে গণতন্ত্রের সেই বাতিঘরটা দিনে দিনে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেই, গণতন্ত্র কঠিন সংকটের মধ্যে রয়েছে। রাজনৈতিক মেরুকরণ প্রবলতর হয়েছে এবং রাজনীতিতে অর্থের ব্যাবহার ক্রমবর্ধমান।
মোটামুটি ৬৪ শতাংশ মার্কিন নাগরিক বিশ্বাস করে ও মনে করে যে তাদের গণতন্ত্র সংকটের ভেতরে রয়েছে। তারা তাদের সরকার কর্তৃক চর্চিত গণতন্ত্রের বিভ্রমে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।
এতগুলো ‘আমেরিকান প্রহসনের পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি গণতন্ত্রের জন্য আরেকটি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করতে পারবে?’ মনে হচ্ছে এটা কর্তৃত্ব ও পৃথিবীতে বিভাজন ছাড়া আর কিছুই আনবে না।
সিজিটিএন-এর থিংকট্যাঙ্ক ও চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইনিজ ইনস্টিটিউট অব পাবলিক অপিনিয়ন পরিচালিত এক বৈশ্বিক জরীপ অনুযায়ী শতকরা ৭৪.৫ ভাগ বৈশ্বিক উত্তরদাতা বিশ্বাস করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ক্ষমতা সাধারণ মানুষের তুলনায় নগণ্যসংখ্যক বিত্তশালীদের পক্ষে কাজ করে।
শতকরা ৭৪.৫ ভাগ উত্তরদাতার বিশ্বাস আমেরিকান গণতন্ত্র ধনীদের সেবা করে
বৈশ্বিক জরীপে উত্তরদাতাদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিমা গণতন্ত্রের বর্তমান হালহকিকত ও কর্মকাণ্ড নিয়ে তাদের হতাশা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে শতকরা ৬৮.৬ ভাগ বৈশ্বিক উত্তরদাতা বিশ্বাস করে যে পশ্চিমা গণতন্ত্রের আইনপ্রণেতাদের মধ্যে রয়েছে বহুবিধ দ্বন্দ্ব সংঘাত যা বিভিন্ন বিষয় যেগুলো জনগণের জীবনের সাথে সম্পর্কিত সেগুলোকে বিলম্বিত করছে। উত্তরদাতাদের শতকরা ৬৬.৩ ভাগ উত্তরদাতা বিশ্বাস করে যে পৌনঃপুনিক ক্ষমতা বদল দীর্ঘস্থায়ী নীতিমালা প্রণয়ন ও তা জারি রাখায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।
শতকরা ৭২.৫ ভাগ উত্তরদাতা বিশ্বাস করেন যে আমেরিকান রাজনীতিবাদরা শুধুমাত্র নির্বাচনের সময় জনগণের ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেন। কিন্তু নির্বাচনের পর সে-সব উপেক্ষা করেন এবং বেমালুম ভুলে যান।
আমেরিকার গণতন্ত্র মারাত্মক সামাজিক দ্বন্দ্বের কোন সমাধান করতে পারে না। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দাবী করে যে তারা গণতন্ত্রের অভিভাবক, কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে সংঘটিত ধারাবাহিক ঘটনাবলী যেমন অভিবাসন সমস্যা, বর্ণবাদী উত্তেজনা এবং মারণাস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহারের মতো ঘটনাবলী প্রমাণ করে যে দেশটিতে শাসনব্যবস্থায় রয়েছে চরম সংকট এবং তারা তাদের গণতন্ত্র নিয়ে কপটতা করে যাচ্ছে। বৈশ্বিক জরীপ অনুসারে শতকরা ৮৮.৬ ভাগ উত্তরদাতা মনে করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদ ও সংবাদকর্মীরা মনে করে যে তারা ‘সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা’র নামে সংবাদ মাধ্যমের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভ্রান্ত তথ্যাবলী প্রচার ও প্রকাশ করে যাচ্ছে যা পরিণামে বর্ণবাদী ঘৃণা ও চরমপন্থাকে উস্কে দিচ্ছে। উত্তরদাতাদের শতকরা ৬০.৩ ভাগ বিশ্বাস করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মারণাস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহারজনিত সন্ত্রাসের সমস্যা মোকাবেলা করার মতো সামাজিক বিভেদ মীমাংসায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না।
অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিবেচনা করে যে আমেরিকান ঢংয়ের গণতন্ত্র নাকি সারাবিশ্বের সমস্যা দূরীকরণের একমাত্র সমাধান। তথাকথিত গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে অন্যদের সার্বভৌমত্বকে অবদমিত করার জন্য তাদের অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে আসছে। তারা ক্ষমতা খাটিয়ে অন্য দেশের এবং সারা বিশ্বের শৃঙ্খলাকে আমেরিকার মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার আদলে গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা দেশে দেশে বিভাজনকে উৎসাহিত করছে এবং দ্বন্দ্ব সংঘাতকে গভীরতর করছে। জরীপে অংশগ্রহণকারী শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ উত্তরদাতা অন্য দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সন্ত্রাস বা বিপ্লবের নামে জোরপূর্বক পরিবর্তনের নীতির বিরোধিতা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের সকল কর্মকাণ্ড তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও তর্জন গর্জনের প্রয়াসকে পুরোপুরি উন্মোচিত করেছে।
‘বৈশ্বিক গণতন্ত্র’ শিরোনামে ৩৫টি দেশে পরিচালিত ৩,৭৭৬টি অকাট্য প্রশ্নমালা সম্বলিত এক জরীপের ফলাফল সংগ্রহ করা হয়েছে। এই জরীপে অংশগ্রহণকারীরা উন্নত সব দেশ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিসহ উন্নয়নশীল কয়েকটি দেশ যেমন নামিবিয়া, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তানের অধিবাসী।
চীনা গণতন্ত্র হলো রাজনৈতিক সভ্যতার এক নতুন রূপ: বিশেষজ্ঞমহল
কয়েকদিন আগে মধ্য চীনের হুনান প্রদেশের রাজধানী চাংশায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞমণ্ডলী মতামত প্রদান করেন যে পশ্চিমের প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র থেকে ভিন্ন ধরনের এক গণতন্ত্র হিসেবে চীনা গণতন্ত্র জনগণের অংশগ্রহণকে মর্মমূলে স্থান দিয়েছে।
‘চীনের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সংরক্ষণ’ বিষয়ক এক সেমিনারে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের ৩০ জন বিশেষজ্ঞ ও গবেষক অংশগ্রহণ করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন পশ্চিমা দেশগুলোর অসংখ্য মানুষ মনে করে যে চীনে কোন গণতন্ত্র নেই। এক্ষেত্রে তাদের ধারণা এই বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত যে কোন দেশে দুই দল বা বহু দলের উপস্থিতি ছাড়া গণতন্ত্র সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থার মতোই চীনের সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র দেশের অভ্যন্তরে অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপর ভিত্তি করে জাতীয় পরিস্থিতিতে বিকশিত হয়েছে।
চীনা সমাজে মানবাধিকার গবেষণা সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট লু গুয়াংজিন বলেন, চীনা গণতন্ত্র চীনের রাজনৈতিক অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন যার রয়েছে চারটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য-এটি হলো সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র, একটি সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা সমৃদ্ধ জনগণের গণতন্ত্র, বিকাশমান গণতন্ত্র এবং দেশটির শাসনভার জনগণের উপর ন্যস্ত।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আইনশাস্ত্র বিষয়ক নর্থওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবাধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক ইনস্টিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টর কিয়ান জিনিয়ু বলেন যে চীনা গণতন্ত্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো জনগণের অংশগ্রহণ রয়েছে এর মূলে যা পশ্চিমা গণতন্ত্র থেকে ভিন্ন এবং রাজনৈতিক সভ্যতার নতুন রূপ। চীনের সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের মূল বিষয় বলে বিবেচনা করা হয় রাজনীতিতে জনগণের অংশগ্রহণকে। যেমনটা সংবিধানে লেখা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত।’এই ধারণাটি প্রতিফলিত হয় জনগণের কংগ্রেস পদ্ধতি ও রাজনৈতিক মতবিনিময়ের মাধ্যমে।
জাতীয় গণ কংগ্রেস ও স্থানীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি নির্বাচন সমাজের সর্বস্তরের ৫৬টি জাতিগোষ্ঠীর জনগণের মাধ্যমে। তারা একসাথে সম্মিলিত হয়ে প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করে জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় বিষয়সমূহে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই রাজনৈতিক ব্যবস্থা সমগ্র সমাজের বুদ্ধিমত্তা ও শক্তিমত্তার পূর্ণ মূল্যায়ন করে যাতে তারা একটি সর্বজনগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
বিশেষজ্ঞমণ্ডলী তাদের মতামতে একথাও তুলে ধরেন যে কোন প্রক্রিয়ায় চীনা গণতন্ত্র আইন নির্ভর শাসনকার্য ও মানবাধিকার সংরক্ষণ কার্যক্রমকে নিশ্চিত করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘গণতন্ত্রের জন্য শীর্ষ সম্মেলন’ আসলে গণতন্ত্রের মৌল ধারণার পরিপন্থী
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন বিশেষ বিশেষ কয়েকটি দেশকে নিয়ে আহুত তথাকথিত দ্বিতীয় ‘গণতন্ত্রের জন্য শীর্ষ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হলো বিভিন্ন দেশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মান দ্বারা সিদ্ধ করা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার জন্য অপরাপর দেশসমূহের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আহুত এই শীর্ষ সম্মেলন সারাবিশ্বকে বিভাজিত করার এক প্রয়াস ভিন্ন কিছু নয়।
মাও আরো বলেন, এই সম্মেলন মারাত্মকভাবে গণতন্ত্রের সত্যিকারের অর্থ, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের কর্তব্যকর্ম এবং জাতিসংঘের উদ্দেশ্য ও নীতিমালার বিপরীতে কাজ করবে এবং এটা কিছুতেই আন্তর্জাতিক সংহতি ও সাধারণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার অনুকূল হবে না।
সূত্র: সিজিটিএন (চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক)
অনুবাদক: সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ; সদস্য, বাঙলাদেশ কমিউনিস্ট কর্মীসংঘ।