ব্রিকস সম্প্রসারণ
বিপ্লব রঞ্জন সাহা
গত ২৩ জুন চীনের রাজধানী বেইজিং-এ ব্রিকস-এর সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ব্রাজিল-রাশিয়া-ভারত-চীন-দক্ষিণ আফ্রিকার অংশগ্রহণে ব্রিকসের ১৪তম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিকসের সদস্যরা আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসী তৎপরতা এবং সন্ত্রাসবাদে আর্থিক সহযোগিতাসহ সকল ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাদের জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করেছে।
উক্ত সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সামরিক জোটের সম্প্রসারণ এবং নিজ দেশের নিরাপত্তার অজুহাতে অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটানোর যেকোন প্রয়াসের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। অপর দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে ব্রিকসের গুরুত্বের দিকে আলোকপাত করেন।
যখন ন্যাটোর মতো একটি সামরিক জোটের সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ মহাতৎপর এবং সেই তৎপরতার অংশ হিসেবে ইউক্রনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানকে আগ্রাসন বলে প্রোপাগাণ্ডা চালিয়ে যুদ্ধকে দীর্ঘায়ত করার কৌশল বেছে নিয়েছে ঠিক তখনই ব্রিকসের এই শীর্ষ সম্মেলনে যেসব বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে সেগুলো হলো:
প্রথমত, যখন সারা পৃথিবীতে ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক অচলাবস্থা বিরাজমান, ঠিক সেই মুহূর্তে ব্রিকসের এই শীর্ষ সম্মেলন থেকে যৌথভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, তারা চলমান সংকট মোকাবেলায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করছে। আর ঠিক এই কারণেই ব্রিকসের তিন সদস্য রাষ্ট্র চীন, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বিষয়ে জাতিসংঘে উত্থাপিত প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে।
দ্বিতীয়ত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার সূচনা বক্তব্যে ব্রিকসের সামগ্রিক শক্তি বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোকপাত করে, কোভিড পরবর্তী অর্থনীতির পুনর্গঠনের জন্য ব্রিকসের সহযোগিতার বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন।
পরবর্তীতে এ প্রসঙ্গে আলোচনা হয় যে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ব্রিকসের সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা এক্ষেত্রে ব্যাপক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। এ প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদী তার আলোচনায় নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্যসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এবং ব্রিকসের গাঠনিক পরিবর্তন যা ব্রিকসের প্রভাবকে বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মতামত প্রদান করেন।
তৃতীয়ত, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিশ্ব শান্তির পক্ষে এবং ‘মনস্তাত্তিক যুদ্ধের মানসিকতা’র বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের জোরালো আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে তিনি ব্রিকসের সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে পরস্পরকে সমর্থনের আহ্বান জানিয়ে বলেন যে, চীনের প্রস্তাবিত বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগকে বাস্তবায়িত করার উপযুক্ত সময় হয়েছে।
তিনি ব্রিকস বাণিজ্যিক ফোরামকে উদ্দেশ করে বলেন, বর্তমানের ইউক্রেন সংকট আমাদেরকে সতর্ক হওয়ার ইঙ্গিত প্রদান করছে এবং সামরিক জোটের সম্প্রসারণ ও নিজের নিরাপত্তার অজুহাতে অন্যদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার উপযুক্ত সময় হয়েছে। এই শীর্ষ সম্মেলন থেকেই তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নিশ্চিত করেন যে চীন সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা প্রশ্নে মস্কোর মূল স্বার্থকে সবসময় সমর্থন দিয়ে যাবে এবং একই সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইতিহাসের ভুল পথ না নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
চতুর্থত, ব্রিকসের এই শীর্ষ সম্মেলন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসকে মদদ দেওয়ার উদ্দেশ্যে অর্থ বিনিয়োগের বিরুদ্ধে একটি জোরালো ঐক্য স্থাপনের নীতি গৃহীত হয়েছে। এই সম্মেলনে এই মতামত ব্যক্ত হয়েছে যে কোন ধর্ম, জাতীয়তা, জাতিগোষ্ঠী এবং সভ্যতারই সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত হওয়া উচিত নয়।
এই শীর্ষ সম্মেলনে সম্পাদিত চুক্তিতে বহুপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের উপায় অনুসন্ধানের দিকে জোর দিয়ে বলা হয় যে বর্তমানে চলমান রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের মাধ্যমে অন্যদেরকে দাবিয়ে রাখার জন্য সংঘটিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে।
পঞ্চমত, ব্রিকস উদ্যোগ দুর্নীতির জন্য নিরাপদ স্বর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে দুর্নীতি বিরোধী সক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করার ব্যাপারে অঙ্গীকার ঘোষণা করেছে। দুর্নীতি বিরোধী কর্মকাণ্ডে একে অপরের অভিজ্ঞতা আদান প্রদান ও সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছে ষষ্ঠত, আন্ত-রাষ্ট্রীয় মাদক চালান, পরিবহন ও বিপণনের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। এছাড়াও বর্তমান বিশ্বে মাদকের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে সকলেই তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সপ্তমত, কোভিড উত্তর অর্থনীতিকে চাঙাকরণের লক্ষ্যে সহযোগিতার কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে।
অষ্টমত, ই-কমার্সের এই যুগে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতকরণের উপায় অনুসন্ধান করা হয়েছে।
নবমত, বাণিজ্য সম্পৃক্তি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ব্রিকসের কেন্দ্রীয় লক্ষ্য স্থির করার ব্যাপারে এক যৌথ ঘোষণা এসেছে।
এছাড়াও অর্থায়ন সংক্রান্ত নেটওয়ার্ক গঠনে ব্রিকসের থিংকট্যাঙ্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে।
উপরোল্লিখিত লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য এই শীর্ষ সম্মেলনে সাংগঠনিক দিকটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। তাই ২০২২ সালে ব্রিকস গ্রুপিং-এ চীনের সভাপতিত্বের প্রধান হলমার্ক হলো ব্রিকস প্লাস ফরম্যাটকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের পরিকল্পনাকে উন্মোচন করা এবং ব্রিকস গোষ্ঠীর অন্তঃসার সম্প্রসারণের সম্ভাবনাকে খুঁজে বের করা। ব্রিকস প্লাস ফরম্যাটের ভবিষ্যৎ গতিপথ নিয়ে চলমান আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে, এই গোষ্ঠীর সম্প্রসারণ কি নতুন নতুন দেশকে ব্রিকসের সাথে একে একে যুক্ত করার ভেতর দিয়ে অগ্রসর হবে নাকি ফরম্যাটটি ‘একীভবনের একীভবন’ পদ্ধতিতে অর্থাৎ ব্রিকসের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য একটি পটভূমি গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে।
এই পর্যায়ে এটি প্রতীয়মান হচ্ছে যে দুই পদ্ধতিতেই কাজটি করা সম্ভব এবং দুটি পদ্ধতিরই ভালো মন্দ দিক রয়েছে। কিন্তু আঞ্চলিক ‘একীভবনের একীভবন’ মডেলটির সুনির্দিষ্ট কিছু সুবিধা রয়েছে-আর তা হলো ‘ব্রিকস প্লাস’-এর মাধ্যমে সংখ্যাবৃদ্ধি যা বৈশ্বিক দক্ষিণাঞ্চলের বাদবাকি অংশের জন্য ব্রিকস কেন্দ্র কর্তৃক গৃহীত অর্থনৈতিক কর্মসূচিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য লক্ষণীয় সম্প্রসারণকে বাস্তবায়ন করা।
মাত্রাগত দিক থেকে, ব্রিকস সম্প্রসারণের দুই পদ্ধতিকে পাটীগাণিতিক বৃদ্ধি ও জ্যামিতিক বৃদ্ধির মধ্যকার পার্থক্য দিয়ে গাণিতিকভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। যদি এক এক করে ব্রিকস গোষ্ঠীর সম্প্রসারণ করা হয় তাহলে তা পাটীগাণিতিক সম্প্রসারণের উদাহরণ হবে, কিন্তু যদি এই সম্প্রসারণ ‘একীভবনের একীভবন’ ভিত্তিক হয় তাহলে তা হবে জ্যামিতিক সম্প্রসারণের উদাহরণ যা অনেক বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও দ্রুত সম্প্রসারণশীল।
পাটীগাণিতিক অগ্রসরতার বিবেচনায়, ব্রিকসের সম্প্রসারণের ঢেউয়ের সাথে জড়িয়ে রয়েছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক বা একাধিক হেভিওয়েট দেশের পর্যায়ক্রমিক সম্পৃক্তি (সম্ভবত বৈশ্বিক দক্ষিণাঞ্চলীয় জি-২০ ভুক্ত দেশসমূহ)।
এর বিকল্পটি হলো ব্রিকসের পাঁচ সদস্য রাষ্ট্রের আঞ্চলিক একীভবনের মধ্য দিয়ে সংখ্যাবৃদ্ধি-যারা বিমসের (বিইএএমএস) প্রতিনিধিত্ব করে যার অন্তর্ভুক্ত বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল এ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশান, ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন (ইএইইউ), দি আসিয়ান-চায়না ফ্রি ট্রেড এরিয়া, মারকোসার এবং দি সাউথ আফ্রিকান কাস্টমস ইউনিয়ন-যার মাধ্যমে ব্রিকস প্লাস উদ্যোগের ক্ষেত্রে পাঁচগুণ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ব্রিকসের সাথে সম্পৃক্ত হবে পঁচিশ সদস্য যা জ্যামিতিক হারে সংখ্যা বৃদ্ধিকে নির্দেশ করে। আবার এসব দেশগুলো ব্রিকসের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিবেশীও বটে।
এই ‘ব্রিকস প্লাস’ জ্যামিতিক সংখ্যাবৃদ্ধি বিষয়টিকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যেতে পারে যেখানে আরো বেশি বেশি দেশ এই বৃত্তের ভেতরে সম্পৃক্ত হবে এবং তারা সকলে মিলে এবং একটি বিস্তৃত পরিসরের ভিত্তিভুমি গড়ে তুলবে যার অন্তর্ভুক্ত হবে ইউনিয়ন অব আফ্রিকা, কমিউনিটি অব ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান স্টেটস অব ল্যাটিন আমেরিকা এবং ইউরেশিয়ান ইকোনমিজ ফ্রম দি গ্লোবাল সাউথ।
সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন, দি গাল্ফ কো-অপারেশান কাউন্সিল, আসিয়ান, দি সাউথ এশিয়ান এসোসিয়েশান ফর রিজিওনাল করপোরেশন এবং ইএইইউ-এর মতো মূল আঞ্চলিক একীভবনের উপর ভিত্তি করে উন্নয়ন অর্থনীতির ইউরেশিয়ান রাষ্ট্রপুঞ্জ গড়ে তোলা হতে পারে।
বৈশ্বিক দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে এই ধরনের সম্প্রসারিত ভিত্তিভূমিকে নামাঙ্কিত করা যেতে পারে ট্রিয়া- টিআরআইএ (ট্রাইলেটারাল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এলায়েন্স) বলে এবং সেটি ১২৫ থেকে ১৩০টি উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ।
ব্রিকস প্লাস ভিত্তিভূমির এই দ্বিতীয় পর্যায়টি ‘পাঁচ গুণিতক পাঁচ গুণিতক পাঁচ’ জ্যামিতিক সংখ্যাবৃদ্ধিতে রূপ নিবে-অথবা পাঁচ ব্রিকস অর্থনীতির পাঁচ গুণিতক হয়ে যাবে।
ব্রিকস প্লাস বৃত্তের এই সম্প্রসারণে এ পর্যায়ের সংখ্যা বৃদ্ধি একে একটি উচ্চতর স্তরে নিয়ে যেতে পারে। যদি কেউ দ্বিপাক্ষিক অথবা বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি, ডিজিটাল জোট এবং অন্যান্য চুক্তিকে কার্যকর করে যা বাস্তবায়িত হবে ব্রিকস প্লাস ভিত্তিভূমির উপর।
উদাহরণস্বরূপ ইসরায়েল-মারকোসর ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট অথবা দি সাউদার্ন আফ্রিকান কাস্টমস ইউনিয়ন-দি ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড এসোসিয়েশন ইত্যাদি। ব্রিকস প্লাস বৃত্তের অভ্যন্তরের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে যুক্ত করতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে সম্প্রসারিত করা হতে পারে।
এই পর্যায়ে ব্রিকস প্লাস ভিত্তিভূমি বরাবর বহুমুখী সংখ্যাবৃদ্ধি ও তাদের ভেতরে সামঞ্জস্যকরণের প্রক্রিয়ার সূচনা হলো-যা প্রত্যেকটি প্রধান অঞ্চলে পরিব্যপ্ত হবে এবং বৈশ্বিক দক্ষিণাঞ্চলের আঞ্চলিক সংখ্যাবৃদ্ধিকে সমন্বিত করার জন্য রয়েছে এর জোটবদ্ধতার নিজস্ব জাল যেটাকে বৈশ্বিক দক্ষিণাঞ্চলীয় সম্প্রসারিত নেটওয়ার্কের ভেতর দিয়ে ভাগ হতে পারে।
এ ধরনের বাড়তি বহুমুখীনতার প্রভাব হবে অনেক বেশি শক্তিশালী, বর্ধিত সংখ্যক ব্রিকস প্লাস ভিত্তিভূমির যত বেশি খোলামেলা মনোভাব এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে ও সারা বিশ্ব পরিমণ্ডলে উন্নয়নশীল অর্থনীতিসমূহের এই জোটের দেশসমূহ ও অংশীদারদের ভেতরে তত বেশি নিবিড় যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
অন্য কথায়, বহুমুখী প্রভাব বাড়ানোর উদ্দেশ্যকে সক্ষম করে তুলতে, ব্রিকস প্লাস ভিত্তিভূমির ‘একীভবনের একীভবন’ নীতিকে অনিবার্য বলে মেনে নিতে হবে, যা আঞ্চলিক জোটবদ্ধতার জন্য পরিমাপযোগ্য এবং সংযোজনযোগ্য। এর ফলশ্রুতিতে এটা হয়তো সুনির্দিষ্ট জোরদারকরণের মাধ্যমে আঞ্চলিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলাকে সহজ করে তুলবে। এটি সুনির্দিষ্টভাবে পরিবর্তনযোগ্য ডিজিটাল অর্থনৈতিক জোট গঠনের জন্য বৃহত্তর সুযোগ সৃষ্টি করবে।
মোটের উপর, ব্রিকস প্লাস -এর পথে একটি দেশ থেকে আরেকটি দেশের সংযোজনের মাধ্যমে ব্রিকসের মূলকেন্দ্র সম্প্রসারণ যদি নিজস্ব উদ্যোগেই সম্পন্ন হয়ে একটি বৃহত্তর জোট গঠিত হয়, তাহলে তা বর্তমান অবস্থা এবং বৈশ্বিক দক্ষিণাঞ্চলের বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রশস্ততর ভূমিকা রাখার সুযোগ আনয়নে ক্ষুদ্র পরিবর্তন আনবে।
একই সময়ে, একীভবনের একীভবন প্রক্রিয়া ব্রিকস প্লাসে যে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে তা অনেক বেশি বলিষ্ঠ হবে যদি সে ধরনের সুযোগ উন্মুক্ত, জোরালো এবং আঞ্চলিক একীভবনের সৃজনশীল সুযোগ তৈরি করা যায়-এটি অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে অতি প্রত্যাশিত বহুগুণিতকরণের প্রভাব সৃষ্টি করবে এবং তা বিশ্বায়নের নতুন এক প্রক্রিয়ার জন্ম দিবে, যা উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে।
এই ধরনের একটি দৃষ্টান্তই হতে পারে মোটের উপর ব্রিকসের আসল লক্ষ্য-ব্রিকসের সত্যিকারের মূল্য আলাদা আলাদাভাবে এর প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাদের সকলের সমন্বিত অস্তিত্বের মধ্যে নিহিত যারা একসাথে বৈশ্বিক অর্থনীতির স্থাপত্যসম্মত অট্টালিকাকে গড়ে তুলবে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ; সদস্য, বাঙলাদেশ কমিউনিস্ট কর্মীসংঘ।