ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনের শহীদ সোমেন চন্দের ৮১তম হত্যাবার্ষিকী পালিত
ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনের বীর শহীদ মার্কসবাদী লেখক কমরেড সোমেন চন্দের হত্যাদিবস ৮১তম হত্যাবার্ষিকী পালিত হয়েছে রাজধানী ঢাকায়।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সূত্রাপুর থানা কমিটির উদ্যোগে আজ (০৮ মার্চ ২০২৩), বুধবার সূত্রাপুরের হৃষিকেশ দাশ রোড কদমতলায় সোমেন চন্দের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করা হয়।
সিপিবি কেন্দ্রিয় কমিটি, সিপিবি সূত্রাপুর থানা কমিটি, প্রগতি লেখক সংঘ, সোমেন চন্দ চর্চা কেন্দ্র, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করে।
শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পনের পর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সূত্রাপুর থানা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কমরেড বিকাশ সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা কমরেড শাহ আলম, সিপিবি কেন্দ্রিয় কমিটির উপদেষ্টা শ্রমিক আন্দোলনের পুরোধা বীরমুক্তিযোদ্ধা কমরেড মনজুরুল আহসান খান, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, সাংবাদিক রহমান মুস্তাফিজ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, সোমেন চন্দ চর্চা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ড. বাবুল বিশ্বাস, সিপিবি সূত্রাপুর থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বী খান।
কমরেড শাহ আলম বলেন, ১৯৪২ সালের এইদিন ঢাকার বুদ্ধিজীবি, লেখক ও সাহিত্যেকগণ এই শহরে ফ্যাসিবাদবিরোধী সম্মেলনের আয়োজন করেন। কমরেড বঙ্কিম মুখার্জী ও কমরেড জ্যোতি বসু বক্তা হিসেবে সম্মেলনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। সেইদিন কমরেড সোমেন চন্দ সোভিয়েত সুহৃদ সমিতির উদ্যোগে রেলওয়ে শ্রমিকদের নিয়ে একটি মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তখন এইস্থানে ফ্যাসিবাদী গুন্ডারা তার উপড় হামলা চালায়। হামলায় রাস্তার উপড়েই নির্মমভাবে নিহত হন কমরেড সোমেন চন্দ। তিনি বাংলার ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ।
কমরেড মনজুরুল আহসান খান বলেন, ১৯২০ সালের ২৪ মে তিনি নরসিংদী জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি পোগোজ স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ঢাকা মিটফোর্ড মেডিক্যাল স্কুলে ভর্তি হন এই মেধাবী ছাত্র। কিন্তু স্বাস্থ্য খারাপ থাকার কারণে তিনি সেখানে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেন নি। কমরেড সোমেন প্রগতি লেখক সংঘে সাথে যুক্ত হন এবং মার্কসবাদী রাজনীতি ও সাহিত্য আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে যান। তিনি প্রথম বাংলা গণসাহিত্যের উপড় কাজ করেন। ১৯৪১ সালে তিনি প্রগতি লেখক সংঘের সম্পাদক নির্বাচিত হন। সোমেন চন্দের রচনা সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক সভাসমূহে পাঠ করা হত। মাত্র ১৭ বছরেই তিনি “বন্যা” এর মতো উপন্যাস লেখেন। তিনি জীবনকালে বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন কাজে যুক্ত ছিলেন। কলকাতা বাংলা একাডেমী তার নামে পুরস্কার প্রবর্তন করে।
তিনি আরও বলেন, কৃর্তিমানের মৃত্যু হয় না। আজ যখন ফ্যাসিবাদী শক্তি আমাদের উপড় হামলে পড়ে, আমাদের রুদ্ধ করতে চায় তখনই সোমেন চন্দ জরুরি হয়ে পড়ে। মার্কসবাদী চর্চাতে আজও সোমেন চন্দ্র জরুরি। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সোমেন থেকে আমাদের আরো উজ্জিবিত হতে হবে। মার্কসবাদের সাথে সাথে সোমেন সাহিত্যও পড়তে হবে। সোমেন যে শোষণমুক্তির স্বপ্ন দেখেছিল সেই শোষণ মুক্ত দেশ গড়ায় আজ শপথ নিতে হবে।
সাংবাদিক রহমান মুস্তাফিজ বাংলাদেশে সোমেন চর্চার ইতিহাস উল্লেখ করে বলেন, কমরেড সোমেনের এই হত্যাস্থান খুঁজে বের করা সহজসাধ্য বিষয় ছিল না। ১৯৯৩ সাল থেকে আমরা কয়েকজন এই দিবস এইস্থানে পালনে উদ্যোগ গ্রহণ করি এবং তা এখন ধারাবাহিকভাবে পালন হচ্ছে। শুধু দিবস পালন নয় সোমেন চর্চা আজ জরুরি। সোমেনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন জরুরি।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, ফ্যাসিবাদ ও শোষকের কবর রচনা করতেই হবে। ওরা মুক্ত মানুষের মুক্ত সমাজ গড়তে দিতে চায় না। এরা শোষণ করে টাকার পাহাড় গড়ছে। এরা মানবতার শত্রু। আসুন আজ শপথ নিয়ে আরো জোরদার করি আমাদের লড়াই সংগ্রাম।