প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ বাঁচান
পৃথিবীজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা দিনকে দিন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার সঙ্গে গত দেড় বছর ধরে যুক্ত হয়েছে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। এই সময়ে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ (বজ্রপাত, ভূমিকম্প, বন্যা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা, ঘূর্ণিঝড়) একটি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য প্রধানত পরিবেশ দূষণকেই দায়ী করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। মানুষ মূলত নিজেদের স্বার্থে ধ্বংস করছে প্রকৃতিকে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে মানবজাতি। এর প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। উন্নত বিশ্বে উন্নয়নের মহাযজ্ঞে প্রতিনিয়ত পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে অনবরত কার্বন নিঃসরণ বাড়ছে। এ কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতাও বাড়ছে সমান হারে। পাশাপাশি বায়ুমন্ডল উত্তপ্ত হওয়ায় ক্রমশ মেরু অঞ্চলের বরফ গলে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। এতে জলবায়ুর ওপরও পড়ছে বিরূপ প্রভাব। জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকির অন্যতম প্রধান শিকারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক তাপমাত্রা অতিমাত্রায় বৃদ্ধির কারণে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তাতে প্রাণিবৈচিত্র্যের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। যদি প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঠেকাতে প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয় তাহলে মহাধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে এই পৃথিবী।
পরিবেশ দূষণের প্রধান কয়েকটি কারণ হলো- জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শিল্পায়ন, বনজসম্পদের ধ্বংস, প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, কলকারকাখানার বর্জ্য পদার্থ যত্রতত্র নিঃসরণ, সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব, যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়া, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার, বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের অপব্যবহার, যুদ্ধ-বিগ্রহ, পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা, গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি।
বায়ু প্রকৃতির এক অফুরন্ত নিয়ামক। বায়ুতে কার্বন-ডাইঅক্সাইড বেড়ে যাওয়ার কারণে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে অসময় বর্ষণ, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অকাল বন্যার মতো নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সৃষ্টি করছে। বায়ুদূষণের মূলে রয়েছে কলকারখানা, মোটরগাড়ি, ট্রেনের জ্বালানি পুড়ে বিষাক্ত ধোঁয়া, ঘরবাড়ি ও ব্যবসাবাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের উত্তাপ সৃষ্টিকারী যন্ত্রপাতি এবং নানান আবর্জনা।
পরিবেশ রক্ষার জন্য যেকোনো দেশের মোট আয়তনের শতকরা ২৫% বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারি হিসেব অনুযায়ী ১৬% বনভূমির কথা বলা হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে বনভূমির পরিমাণ রয়েছে মাত্র ৮-৯%। সুতরাং পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য আমাদের এ মুহূর্তে দেশের মোট আয়তনের ৩০% জায়গা বনায়নের আওতায় আনা অতীব প্রয়োজন।
ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস হচ্ছে ধুলোবালি। এসব ধূলিকণা মুখে গেলে মানুষ যত্রতত্র থুতু ও কফ ফেলে। তা আবার ধুলার সঙ্গে মিশে নানা মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকতে পারে। আরেকটি উৎস হচ্ছে কয়লা ও জৈব জ্বালানি পোড়ানোর পাশাপাশি শহুরে যান্ত্রিকতাসহ নানা উৎস থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া ও ধুলো। এসব বাতাসে ক্ষুদ্র কণা ছড়ায়, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বৃক্ষ আমাদের পরম বন্ধু। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রেই বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ফলমূলসহ বৃক্ষের অন্যান্য উপাদান জীবের বেঁচে থাকার অন্যতম উপাদান। কিন্তু একবিংশ শতাব্দিতে এসে সবুজ-শ্যামল পৃথিবীর অস্তিত্ব আজ প্রায় বিপন্ন। বিষাক্ত গ্যাসের কবলে পৃথিবীর বাতাস হয়ে ওঠেছে ভারি এবং প্রাণির জীবনকে করে তুলেছে দুর্বিষহ। ঠিক এমনই সময় বিজ্ঞানীরা এ সুন্দর ভুবনকে সুরক্ষার জন্য, প্রাণিজগতের
অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য একটিমাত্র পথ আবিষ্কার করলেন, আর তা হলো ‘বৃক্ষরোপণ’। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ তথা এই সুন্দর পৃথিবীকে সব প্রাণির জন্য নিরাপদ রাখতে বৃক্ষরোপণ অপরিহার্য। আসুন বৃক্ষরোপণ করি। প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশকে রক্ষা করি।