প্রতিমন্ত্রী মুরাদের অপসারণ দাবি নারী অধিকারকর্মীদের
নারীবিদ্বেষী, বর্ণবাদী এবং যৌন হয়রানিমুলক বক্তব্য দেওয়ায় তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে অপসারণ করার দাবি জানিয়েছে দেশের ৪০ নারী অধিকারকর্মী।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নারী অধিকারকর্মীবৃন্দ গত ২ ডিসেম্বর নাহিদরেইনস নামক একটি অনলাইন লাইভে এসে তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তার নাতনী জায়মা রহমানকে নিয়ে যে লিঙ্গবাদী, কুৎসিত যৌন হয়রানিমুলক মন্তব্য প্রদান করেছে তার তীব্র নিন্দা জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় পদে আসীন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীর মুখে এই ভাষা বাংলাদেশের আপামর নারীদের অপমান এবং অসম্মান করেছে বলে আমরা মনে করি। জনগণের করের টাকায় বেতনভুক্ত বাংলাদেশের মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রীরা বিভিন্ন সময় সংসদে, রাজনৈতিক সভায়, গণমাধ্যমে, সম্মেলনে এরকম নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করে পার পেয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি যৌন হয়রানিকে সমাজ এবং রাষ্ট্রে কাঠামোগত প্রতিষ্ঠিত করার বৈধতা দেওয়া হয়।
নারী নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা জানতে চাই, কীভাবে তথ্যপ্রতিমন্ত্রী ঔদ্ধত্যভাবে বলেন, ‘ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই উঠে না?”।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমাদের পর্যবেক্ষণ বলে ক্ষমতাসীন দলগুলোর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদে প্রায়শই এইধরণের রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনার নাম করে তাদের আধিপত্যমূলক ক্ষমতাকাঠামো টিকিয়ে রাখার জন্য এবং রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ‘নারীকে’ই বিভিন্ন যৌন অসংবেদনশীল বক্তব্যের মাধ্যমে হেয় করে থাকে। আর এই রাষ্ট্রব্যবস্থা এভাবেই সংসদ, আদালত, প্রশাসন তথা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নারীদের নিয়ে বিভিন্ন রকম যৌন হয়রানিমুলক মন্তব্য, তামাশা এবং মতামত দেওয়ার মাধ্যমে সাধারণ নারীর জন্য ভীতির পরিবেশ তৈরিতে উৎসাহিত করে। বিগত বছরগুলোতে আমাদের গণতন্ত্রহীনতা এত চরমে পৌঁছেছে যে, নারীদেরকে নিয়ে এইধরনের যৌনবাদী মন্তব্য করার পরেও বেশিরভাগ সময়ে কোন প্রশাসন, রাষ্ট্রীয় বাহিনী, আদালত, সাংসদকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
সম্প্রতি অনলাইন মাধ্যমে নারীবিদ্বেষী, বর্ণবাদী এবং যৌন হয়রানিমুলক বক্তব্য দেওয়ায় নারী অধিকারকর্মীবৃন্দ তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে যথাযথ জবাবদিহির আওতায় এনে অপসারণের দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, নারী অধিকারকর্মীবৃন্দ বলেন, আমাদের দেশের নারীরা তাদের চলতি জীবনে বারবার এইসকল যৌন হয়রানিমুলক বক্তব্যের শিকার হয়ে থাকে। রাষ্ট্র পরিচালনার নাম করে একজন যৌন হেনস্থাকারী প্রতিমন্ত্রী কোনভাবেই রাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকতে পারে না। সসম্মানে এবং সমমর্যাদায় জীবন ধারণ করা বাংলাদেশের প্রতিটি নারীর নাগরিক অধিকার।
উল্লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন যারা, তারা হলেন- ফরিদা আখতার, নারী নেত্রী; মির্জা তাসলিমা সুলতানা, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; জোবাইদা নাসরিন, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; নাসরিন খন্দকার, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; সায়দিয়া গুলরুখ, সাংবাদিক; নাসরিন সিরাজ, সম্পাদক, ঠোঁটকাটা; স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; সুপ্রীতি ধর, সম্পাদক, উইমেন চ্যাপ্টার; মিথিলা মাহফুজ, শিক্ষক; বীথি ঘোষ, শিল্পী ও সংগঠক, সমগীত; তাসলিমা মিজি, উদ্যোক্তা; মুনমুন শারমীন শামস, সম্পাদক, ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর; ইশরাত জাহান উর্মি, সাংবাদিক; পূরবী তালুকদার, একটিভিস্ট; মোশফেক আরা শিমুল, সম্পাদক, স্পেস; নাসরিন আক্তার সুমি, নারী সংহতি; সুমি রেক্সোনা, নারী সংহতি; দিলশানা পারুল, একটিভিস্ট; মনজুন নাহার, উন্নয়নকর্মী; ফেরদৌস আরা রুমী, উন্নয়নকর্মী; মাহফুজা মালা, উন্নয়নকর্মী; প্রমা ইসরাত, আইনজীবী; নাইমা খালেদ মনিকা, নারী মুক্তি কেন্দ্র; সীমা দত্ত, নারী মুক্তি কেন্দ্র; তানিয়াহ মাহমুদ তিন্নী, শিক্ষক; সুমাইয়া নাসরিন সুমু, একটিভিস্ট; অপরাজিতা সংগীতা, একটিভিস্ট; অর্ণি আনজুম, রাজনৈতিক কর্মী ও একটিভিস্ট; শ্রবণা শফিক দীপ্তি, একটিভিস্ট; রিমঝিম আহমেদ, কবি; শাফিনুর শাফিন, কবি; জেসমিন দীনা রায়, শিক্ষক; রেবেকা নীলা, সাংস্কৃতিক কর্মী; লামিয়া ইসলাম, একটিভিস্ট; অপরাজিতা সংগীতা, একটিভিস্ট; মারজিয়া প্রভা, একটিভিস্ট; প্রাপ্তি তাপসী, একটিভিস্ট; ইসাবা শুহরাত, একটিভিস্ট; নাজিফা জান্নাত, রাজনৈতিক কর্মী ও একটিভিস্ট; মোরসালিনা আনিকা, সাংস্কৃতিক কর্মী।