নাদেজদা কনস্তান্তিনোভনা স্ক্রুপস্কায়া
আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন
নাদেজদা কনস্তান্তিনোভনা স্ক্রুপস্কায়া ১৮৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সেন্ট পিটার্সবুর্গে অভিজাত শ্রেণির এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা কনস্তান্তিন ইগনেতোভিচ স্ক্রুপস্কি ছিলেন সামরিক কর্মকর্তা। সে সময়কার বিপ্লবীদের সাথে তাঁর সংশ্রব ছিল।
প্রথমে নিহিলিস্টদের সাথে, তারপর নারোদপন্থি, তারপর নারোদনায়া ভলিয়া’র-জনগণের স্বাধীনতা গ্রুপের সাথে তাঁর যোগাযোগ ছিল। কনস্তান্তিন ইগনেতোভিচ স্ক্রুপস্কি পোল্যান্ডে জেলার প্রধান শাসনকর্তা হিসাবে কর্মরত অবস্থায় জারের অসহনীয় জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে পোলীয় জনগণের সংগ্রামের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করায় বরখাস্ত ও বিচারের সম্মুখীন হন। তাঁর বিরুদ্ধে পোলীয় ভাষায় কথা বলা, জারের জন্মদিনে দপ্তরে আলোকসজ্জা না করা ইত্যাদি ২২টি অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। দশ বছর মামলা চলার পর মৃত্যুর ঠিক আগে কনস্তান্তিন ইগনেতোভিচ স্ক্রুপস্কি নির্দোষ প্রমাণিত হন। তখন নাদেজদা স্ক্রুপস্কায়ার বয়স মাত্র চৌদ্দ বছর। স্ক্রুপস্কায়ার মা এলিজাবেতা ভেসিলিয়েভনা তিসত্রোভা শৈশবে পিতৃ-মাতৃহীন হন। গভার্নেসের কাজ করে তিনি লেখাপড়া করতেন। সে সময়কালে জারের রাশিয়ায় নারীদের জন্য অনুমোদিত সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত তিনি পড়াশুনা করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর এলিজাবেতা তিসত্রোভা সংসার চালানোর জন্য বড় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে তার ঘরগুলো আলাদা আলাদা ভাড়া দিয়ে উপার্জনের পথ খুঁজে নেন। এতে শৈশবেই স্ক্রুপস্কায়া সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে মেশার সুযোগ পেয়েছিলেন।
স্ক্রুপস্কায়ার শৈশব-কৈশোর
নাদেজদা স্ক্রুপস্কায়া শৈশবে এক বসন্তকালে তাঁর বাবার নিয়োগকর্তা কসিয়াকভ্্স্কায়াদের জমিদারিতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে পরিচিত হন তরুণী স্থানীয় এক শিক্ষয়িত্রী আলেক্সান্দ্রা তিমফেয়েভনা ইয়ার্ভ্স্কায়ার সাথে। সবাই তাকে তিমফেইকা নামে ডাকত। এ শিক্ষয়িত্রী স্ক্রুপস্কায়ার জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন- ‘তিমফেইকার ঘরে ছোঁদের অনেক বই ছিল। আমি সব বই জোড়া দিয়ে মেরামত করতে সাহায্য করতাম। প্রত্যেক রবিবার ওর বাড়িতে অতিথি আসত। সবাই কিশোর বা তরুণ। আমরা সবাই নেক্রাসভের লেখা পড়তাম। তিমফেইকার আমাদের অনেক গল্প বলতো। তা থেকে বুঝেছিলাম যে জমিদাররা ভারি খারাপ। কখনও কৃষকদের তো সাহায্য করেই না, উল্টো শুষে খায়। …একদিন বাবা বললেন তিমফেইকার ঘরে পুলিশ হানা দিয়েছে। ঘরে কিছু নিষিদ্ধ সাহিত্য আর একটা জারের ছবি পাওয়া গেছে। ছবিটার উপর নানা আঁকজোকা। তিমফেইকা ওটা একটা সামান্য কাগজের টুকরার শামিল করে তাতে অঙ্ক করেছিল। পরে শুনেছিলাম প্্স্কভ জেলের একটা জানালাবিহীন প্রকোষ্ঠে তিমফেইকাকে দু’বছর আটকে রাখা হয়েছিল। আমার সাথে তার আর কোনদিন দেখা হয়নি। ….. সে বছর শীতকালে ক্লাসে বসে বসে আমি ছোঁ ছোঁ বাড়ি আঁকতাম। তার মাথায় ‘স্কুল’ লেখা সাইনবোর্ড লতঝু। স্বপ্ন দেখতাম আমি এক গ্রামের স্কুলের শিক্ষয়িত্রী হবো। সেই থেকে গ্রামের স্কুল আর গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়াবার ব্যাপারে আগ্রহ আমার চিরকাল ছিল।’
১৮৮১ সালের পহেলা মার্চ নারোদনায়া ভলিয়ার সদস্যরা জার দ্বিতীয় আলেক্সান্দ্রকে বোমা মেরে হত্যা করে। অনেকের মত স্ক্রুপস্কায়ারও মোহভঙ্গ হয়। ব্যক্তি জারের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ব্যবস্থার বদল না ঘটে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে। অসংখ্য বিপ্লবী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।
স্ক্রুপস্কায়ার প্রিয় কবিদের অন্যতম ছিলেন রাশিয়ার উনবিংশ শতাব্দির জনপ্রিয় কবি নিকোলাই আলেক্সিয়েভিচ নেক্রাসভ, যার কবিতায় গ্রামীণ রাশিয়া এবং রুশ কৃষকদের জীবনসংগ্রাম বিধৃত হতো। অন্যতম রুশ সাহিত্যিক লেভ তলস্তয়ের দার্শনিক চিন্তা তাঁর শৈশবকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। তলস্তয়ের উপন্যাসে ফুটে উঠেছে ধনিক সম্প্রদায়ের আলস্য আর বিলাস ব্যসন। তলস্তয় দেখিয়েছেন ধনীদের সুখে রাখতে কৃষক আর শ্রমিকরা কিভাবে খেটে মরে। স্ক্রুপস্কায়া শোষণমুক্তির পথ খুঁজতে থাকেন তলস্তয়ের দর্শনে। দৈহিক পরিশ্রম আর আত্মশুদ্ধি মধ্যে। কৃষক, শ্রমিকদের সাথে জমিতে, কারখানায় কায়িক পরিশ্রম করেন, কিন্তু শোষণমুক্তির দিশা পান না।
মার্কসবাদের পথে পেলেন মুক্তির দিশা
মেধাবী স্ক্রুপস্কায়ার স্বর্ণপদক নিয়ে মাধ্যমিক স্কুল গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। কিন্তু জারপত্নীর নির্দেশে নারীদের মেডিক্যাল স্কুল ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বন্ধ থাকায় তিনি নিজে নিজে পড়াশুনা চালিয়ে গেলেন। সেন্ট পিটার্সবুর্গে মেয়েদের জন্য পুনরায় উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্মুক্ত হলে তিনি সেখানে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানকার বিষয় ও শিক্ষার পদ্ধতি তাঁকে আগ্রহী করতে পারেনি। তিনি দু’মাসের মধ্যেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।
১৮৮৯ সালে বিশ বছর বয়সে প্রথমবারের মত তিনি ছাত্রদের একটি রাজনৈতিক পাঠচক্রে যোগ দেন। আত্মজীবনীতে লিখেছেন- ‘সেদিন আমার চোখ খুলে গেল। ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। মার্কস ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বই পড়তে আরম্ভ করলাম। বুঝলাম একমাত্র মজুরদের বিপ্লবী আন্দোলনেই জীবনধারা বদলে দিতে পারে, সমাজে সার্থক হতে হলে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে শ্রমিকদের কাজে উৎসর্গ করতে হবে। … একাগ্রচিত্তে “পুঁজি” বইটা পড়তাম প্রথম দুটো অধ্যায় ভারি শক্ত ছিল, কিন্তু তারপর বেশ সহজ হয়ে গেল। সে যেন ঝরণার জল পান করা। বুঝলাম তলস্তয়ের আত্মশুদ্ধি কোন পথ নয়। পথ হলো শক্তিশালী শ্রমিক আন্দোলন। …. একদিন বারান্দায় বসে আছি, সবে সন্ধ্যা হয়েছে, পড়ছি সেই বাক্য কয়টি-” পুঁজিবাদের মৃত্যুঘণ্টা বেজে ওঠে, উদে হয় উচ্ছেদকারীদের। ” বুক এমন ঢিব ঢিব করে উঠল যে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম।’
স্ক্রুপস্কায়া ১৮৯১ সালে সেন্ট পিটার্সবুর্গের শ্রমিকপাড়ায় একটি সান্ধ্যকালীন বিদ্যালয়ে শিক্ষয়িত্রী হিসাবে যোগ দেন। স্কুলটিতে ছয়’শ ছাত্র ছিল, এরা দিনে আশেপাশের কারখানায় কাজ করে সন্ধ্যায় পড়তে আসতো। সেখানে তিনি গণিত, ভুগোল ও ইতিহাস পড়াতেন। এটি আসলে ছিল পার্টিতে শ্রমিকদের রিক্রুট করার একটা কেন্দ্র। ১৮৯৬ সালের আগস্ট মাসে গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর তিনি শ্রমিকদের শিক্ষার কাজ করেন।
১৮৯৩ সালের আগস্ট মাসে ভ. ই. লেনিন সেন্ট পিটার্সবুর্গে আসেন। ব্যারিস্টার এম. এফ. ওলকেনস্টাইনের জুনিয়র হিসাবে নিবন্ধিত হন। তিনি ছাত্র ও শ্রমিকদের সংগঠিত বিভিন্ন মার্কসবাদী পাঠচক্রে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হতেন। ১৮৯৪ সালে লেনিন স্ক্রুপস্কায়াদের পাঠচক্রে বক্তব্য দিতে এলে পরস্পর পরিচিত হন। স্ক্রুপস্কায়া লিখেছেন- ‘অল্প দিনের মধ্যেই দুজনের খুব ভাব হয়ে গেল।’
১৮৯৫ সালে লেনিনের উদ্যোগে সেন্ট পিটার্সবুর্গের বিশটি মার্কসবাদী পাঠচক্র একত্রিত হয়ে গঠন করে ’শ্রমিকশ্রেলির মুক্তি সংগ্রাম সংঘ’। এ বছরের ডিসেম্বর মাসে লেনিনসহ শ্রমিক মুক্তি সংঘের নেতৃবৃন্দ গ্রেপ্তার হয়ে যান। ১৮৯৭ সালের জানুয়ারিতে লেনিন সাইবেরিয়াতে তিন বছরের নির্বাসন দণ্ড পান। তাকে সাইবেরিয়ার শুশেনস্কায়ায় নির্বাসিত করা হয়।
১৮৯৬ সালের আগস্ট মাসে শ্রমিকশ্রেণির মুক্তি সংগ্রাম সংঘের নেতৃত্বে ত্রিশ হাজার সুতাকল শ্রমিক ধর্মঘট করে। শ্রমিকদের ধর্মঘট পরিচালনার অপরাধে স্ক্রুপস্কায়াসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হন। ১৮৯৮ সালে স্ক্রুপস্কায়াকে সাইবেরিয়াতে তিন বছরের নির্বাসন দণ্ড দেয়া হয়। নিজেকে লেনিনের প্রেমিকা দাবি করে নির্বাসনকালে লেনিনের সাথে শুশেনস্কায়ায় থাকার আবেদন জানান স্ক্রুপস্কায়া। সেখানে পৌঁছে দ্রুত বিয়ে সম্পন্ন করার শর্তে কর্তৃপক্ষ আবেদন মঞ্জুর করেন। ১৮৯৮ সালের ২২ জুলাই শুশেনস্কায়ায় ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন ও নাদেজদা কনস্তান্তিনোভনা স্ক্রুপস্কায়ার বিয়ে সম্পন্ন হয়।
নির্বাসনকালে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, দেশে-বিদেশে রাজনৈতিক যোগাযোগ ছাড়াও উভয়ে গভীর মনোনিবেশ করেছিলেন চিরায়ত রুশ সাহিত্য পাঠ ও লেখালেখিতে। এ সময়কালে লেনিনের বিখ্যাত বই ‘রাশিয়ায় পুঁজিবাদের বিকাশ’ রচনায় স্ক্রুপস্কায়া লেনিনকে সহযোগিতা করেন। উভয়ে মিলে অনুবাদ করেন সিডনি ও বিয়েত্রিসের লেখা ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেমোক্রেসির’ দ্বিতীয় খণ্ড। স্ক্রুপস্কায়া রচনা করেন ’দ্য ওমেন ওয়ার্কার’। ১৯০০ সালে নির্বাসন শেষে লেনিন পশ্চিম ইউরোপে চলে যান শ্রমিকশ্রেণির মুক্তি সংগ্রাম সংঘের প্রবাসী নেতৃবৃন্দের সাথে মিলিত হতে। ১৯০১ সালে নির্বাসন শেষে স্ক্রুপস্কায়া লেনিনের সাথে মিলিত হতে পশ্চিম ইউরোপে চলে যান। ১৯০৫ সাল পর্যন্ত তারা মিউনিখ, জেনেভা, লন্ডনসহ বিভিন্ন শহরে অবস্থান করেন। লেনিন ও স্ক্রুপস্কায়ার ইস্ক্রা প্রত্রিকা প্রকাশ ও বিতরণে মূখ্য ভুমিকা রাখেন। স্ক্রুপস্কায়া ইস্ক্রা গ্রুপের সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি মাসে তিন’শ চিঠি পেতেন এবং তার জবাব দিতেন। ১৯০৩ সালে রুশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক লেবার পার্টি (আরএসডিএলপি)’র দ্বিতীয় কংগ্রেসের সাংগঠনিক রিপোর্ট রচনা করেন স্ক্রুপস্কায়া যা কংগ্রেসে উত্থাপন করার কথা ছিল জুলিয়াস মার্তভের। কংগ্রেসে তীব্র রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক মতানৈক্যের কারণে সেটি আর উত্থাপিত হয়নি। ১৯০৩ সাল থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত আরএসডিএলপি (বলশেভিক)’র সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ ছিলেন স্ক্রুপস্কায়া। ১৯০৫ সালে প্রথম রুশ বিপ্লবের সময় স্ক্রুপস্কায়া রাশিয়ায় ফিরে আসেন ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে পুনরায় ফিরে যান এবং পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন শহরে অবস্থান নেন। ১৯১৪ সালে স্ক্রুপস্কায়া, ইনেস্সা আরমান্দ এবং লিলিনা জিনোভিয়েভের উদ্যোগে প্রকাশিত হয় ‘দ্য ওয়ার্কিং ওমেন’ পত্রিকা। পুলিশি খবরদারির কারণে দুই সংখ্যার পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় স্ক্রুপস্কায়া কমিশন ফর দ্য এইড অব রাশিয়ান প্রিজনার্স অব ওয়ার সংগঠনের সম্পাদক ছিলেন। ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পর এপ্রিল মাসে লেনিন ও তিনি পেট্রোগ্রাডে ফিরে আসেন। এসময় তিনি পেট্রোগ্রাডের শ্রমিক অধ্যুষিত ভাইবোর্গ জেলায় যুক্ত হন। ভাইবোর্গের বলশেভিকদের একটি দল যাতে স্ক্রুপস্কায়াও ছিলেন অক্টোবর মাসের কয়েকদিন আগে কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে দেখা করে অভ্যুত্থান তরান্বিত করার আবেদন জানান।
বিপ্লবের পরে গণশিক্ষায় নিবেদিত প্রাণ
অক্টোবর বিপ্লবের পর স্ক্রুপস্কায়াকে বয়স্ক শিক্ষার দায়িত্বে কমিশনার ফর অ্যাডুকেশান আনাতোলি লুনাচারিস্কির সাথে ডেপুটি কমিশনার ফর অ্যাডুকেশান নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯২০ সালে শিক্ষা কমিটির প্রধান মনোনীত হন। ১৯২৯-৩৯ মন্ত্রীর মর্যাদায় ডেপুটি এডুকেশান কমিশার ছিলেন। ১৯১৮ সালে লেনিনবাদী কমসোমল এবং ১৯২২ সালে পাইওনিয়ার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন স্ক্রুপস্কায়া। সোভিয়েত ইউনিয়নে গণপাঠাগার আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি।
১৯২৪ সালের সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯২৭ সালে কন্ট্রোল কমিশনের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩১ সালে সুপ্রিম সোভিয়েতের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩১ সালে স্ক্রুপস্কায়াকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্মানিত নাগরিক ঘোষণা করা হয়।
১৯২৪ সালের ২১ জানুয়ারি লেনিনের মৃত্যুর পর স্ক্রুপস্কায়া তাঁর সমস্ত উদ্যোগ নিয়োজিত করেন বিপ্লবোত্তর নতুন সংস্কৃতি ও নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলতে। হরমোনগত জটিলতার কারণে সন্তান ধারণে সক্ষম ছিলেন না স্ক্রুপস্কায়া। এ প্রসঙ্গে তিনি আত্মজীবনী ‘আমার জীবন’ এ লিখেছেন- ‘আমার নিজের কোনো সন্তানাদি ছিল না বলে চিরকাল আমার মনে দুঃখ ছিল। এখন আর কোনও দুঃখ নেই। এখন বহু সন্তান আমি পেয়েছি- কমসমল আর পাইওনিয়র দলের সকলেই আমার সন্তান। তারা সকলেই লেনিনপন্থি, সকলেই লেনিনপন্থি হতে চায়।’
১৯৩৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অক্টোবর বিপ্লবের অন্যতম কারিগর এবং সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন বিনির্মাণের অন্যতম সারথি কমরেড নাদেজদা কনস্তান্তিনোভনা স্ক্রুপস্কায়া মৃত্যুবরণ করেন।
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি।