দুই মাসে ৩ দফা কমলো ডলারের বিপরীতে টাকার মান
গত দুই মাসে তৃতীয়বারের মত ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমিয়েছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন ৮০ পয়সা কমে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের বিনিময় হার পৌঁছেছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায়।
ডিডব্লিউ বাংলা’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইলসাম জানান, আন্তঃব্যাংক লেনদেনে গত ৯ মে ডলার বিনিময় হয়েছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায়। পরদিন টাকার মান ২৫ পয়সা কমানোয় বিনিময় হার বেড়ে হয় ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা। সোমবার থেকে তা ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শুধু আন্তঃব্যাংক লেনদেনেই ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন হয়েছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। গত বছরের এপ্রিলে ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। জুনে তা এক পয়সা বাড়লেও আগস্ট থেকে টাকার মান দ্রুত কমতে থাকে।
এদিকে দেখা গেছে, খোলা বাজারে ওই দরে ডলার পাওয়া যায় না। মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ডলার কিনতে গত সোমবার ৯৭ টাকাও গুনতে হয়েছে, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। আন্তঃব্যাংক ও খোলা বাজারে ডলারের বিনিময় হারের পার্থক্য এখন সাড়ে ৯ টাকার ওপরে, যা অতীতে আর দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে মাসে (জুন-মার্চ) ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে ৪ হাজার ২৭৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।
এই নয় মাসে যেখানে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় ৪৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। তার মানে ডলার খরচ বেড়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে রপ্তানি বেড়েছে ৩২ দশমিক ৯২ শতাংশ। আর রেমিটেন্স কমেছে ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ডলার যা হাতে আসছে, তার চেয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে বেশি।
পরিস্থিতি সামলাতে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের বিনিময় হার ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও কয়েকটি ব্যাংকে ইতোমধ্যে ডলারের দর উঠেছে ৯২ থেকে ৯৪ টাকায়।
আমদানি ও অন্যান্য প্রয়োজনে ডলার খরচ যত বাড়ছে, তত টান পড়ছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে। গত বছর অগাস্টেই দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৮.০২ বিলিয়ন ডলার ছিল রিজার্ভে। এরপর কমতে কমতে তা ৪১ বিলিয়নের ঘরে নেমে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, টাকার অবম্যূল্যায়নের ফলে আমদানি করা পণ্যর দাম আরো বাড়বে, সেই সঙ্গে বাড়বে মূল্যস্ফীতি। চলতি অর্থবছরে সরকার মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে রাখতে চাইলে গত মার্চ শেষে তা ৬ দশমিক ২২ শতাংশে উঠে গেছে। বাস্তবে এই অংক আরও বেশি বলে অর্থনীতিবিদদের কারও কারও ধারণা।
সূত্র: ডিডব্লিউ বাংলা (অনলাইন)।