জীবিকার ওপর আঘাত বরদাস্ত করা হবে না -কমরেড সেলিম
‘সরকার মানুষের কাজের নিশ্চয়তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করে, যারা রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক চালিয়ে আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে উপার্জন করছে তাদের জীবিকার ওপর আঘাতের পদক্ষেপ নিলে তা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না’।
রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে গতকাল (২২ এপ্রিল ২০২২), শুক্রবার, সকাল ১১ টায় পুরাতন পল্টনস্থ মুক্তি ভবনের সপ্তম তলার সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এসব কথা বলেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস’র সভাপতিত্বে “বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার সংকট ও নিরসনের উপায়” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জননেতা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বাম-গণতান্ত্রিক জোটের সমন্ব^য়ক কমরেড সাইফুল হক, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)’র সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহম্মদ আজম, রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম নাদিম, নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের অন্যতম নেতা বিমল কান্তি দাস, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল হাকিম মাইজভান্ডারী, সুমন মৃধা, কেন্দ্রীয় সংগঠক লিটন নন্দী, কামরাঙ্গিরচর থানা কমিটির সদস্য আব্দুর রহিম, শ্রীনগর থানা কমিটির অন্যতম নেতা সান্দ্র মহন্ত প্রমুখ।
আলোচনা সভায় কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের যাতায়াতের অন্যতম বাহন রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক। কোটি কোটি মানুষের যাতায়াত সেবায় নিয়োজিত এই খাতের ৫০ লক্ষ শ্রমিক। তাঁদের জীবিকা রক্ষা ও উন্নত করা রাষ্ট্র এবং সমাজের দায়িত্ব হওয়া উচিৎ, কিন্তু সরকার সেই দায়িত্ব পালন না করে তাঁদের জীবন-জীবিকাকে নানা ভাবে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। শ্রমিকের জীবন-জীবিকা সংকটের মুখে ঠেলে দেয়া শুধু অমানবিক নয়, বৈষম্যের নীতিতে পরিচালিত রাষ্ট্রের শ্রমিকের প্রতি বৈষম্যের বহিঃপ্রকাশ।
কমরেড সেলিম আরো বলেন, পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর দেশের অগ্রগতি বহুলাংশে নির্ভরশীল। নৌ-রেল সেবাসহ, গণপরিবহনের সেবা খাতের উন্নতি না করে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক বন্ধের চেষ্টা দেশের অগ্রগতির জন্য আত্মঘাতী হবে।
অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, রাষ্ট্র শ্রমিকদের শোষণ করে বড়োলোকদের বড়োলোক হওয়ার পথ আরও মসৃণ করছে। রাষ্ট্রের এই শোষণ-বৈষম্যের চরিত্র শ্রমিক আজ বুঝতে শিখেছে। শ্রমিক এই বৈষম্যের শিকল ছিন্ন করে শোষণমুক্ত রাষ্ট্র গঠন করবেই।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, উচ্চ বেকারত্বের এই দেশে রিকশা-ভ্যান-ব্যাটারিরিকশা একটি উন্মুক্ত কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। প্রায় আড়াই কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা এর সঙ্গে সম্পর্কিত। আরও কয়েক কোটি মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের চাহিদা মেটায় এসব পরিবহন। জিডিপিতে তাদের অবদান ৩ শতাংশ, ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে তারা বিশাল অবদান রাখে। অথচ এই বিশাল অবদানের জনগোষ্ঠী অব্যাহত রাষ্ট্রীয় অপবাদ, নিপীড়ন, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজী এবং সরকারের স্বেচ্ছাচরিতার শিকার।
তিনি আরও বলেন, এই শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা নিরাপদ করার জন্য প্রয়োজন বুয়েটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এগুলোর মান উন্নয়ন, তাদের কাজ নিরাপদ করার জন্য রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন।
সাইফুল হক বলেন, শ্রমিক জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে রাষ্ট্রের সকল শোষণের অবসান ঘটাতে হবে। শোষণমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রামে শ্রমিকরাই অগ্র ভূমিকায় থাকবে।
রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ব্যাটারি রিকশার ব্যাটারি বৈধভাবে তৈরি, যে যাত্রী সে বৈধ, যে চালায় বৈধ নাগরিক, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ আছে চলার। এই রিকশার সব কিছু বৈধ ফলে রিকশাও বৈধ। অবৈধ হলো, পুলিশের ও প্রভাবশালীদের চাঁদাবাজি। মালিক, শ্রমিকসহ সকল নাগরিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে, এই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
ড. মোহাম্মদ আজম বলেন, আধুনিক এই সময়ে যে কোনো শ্রমিকের মাঝে যদি প্রযুক্তির মাধ্যমে শ্রম কমানো যায় তবে তা গ্রহণ করাই আধুনিকতা-উন্নয়ন, আর এর বিরোধিতা করা হচ্ছে অমানবিকতা-বর্বরতা। রাষ্ট্র উন্নয়নের কথা মুখে বলে আর বাস্তবে রিকশা উচ্ছেদ করে বর্বরতার পথে হাঁটছে।
আলোচনা সভায় বক্তারা শ্রমিকের জীবিকার নিরাপত্তার জন্য ‘জীবিকা সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন ও অবিলম্বে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ইজিবাইকের বুয়েট প্রস্তাবিত মডেলে আধুনিকায়ন করে লাইসেন্স প্রদানের দাবি জানান।
আলোচনা সভার শুরুতে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের মহান নেতা কমরেড ভ্লাদিমির লেনিনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করা হয়।
আলোচনা সভা পরবর্তী সেশনে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত কর্মশালার প্রশিক্ষক হিসেবে আলোচনা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির অন্যতম সদস্য ও প্রবীণ ট্রেড ইউনিয়ন নেতা কমরেড জাকির হোসেন, রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শাহাদাৎ খাঁ, রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মঞ্জুর মঈন।