‘চালসহ দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া থামাও’ -ক্ষেতমজুর সমিতি
‘চালসহ দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া থামাও’ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত করেছে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি।
গত (৬ নভেম্বর) শনিবার চাল, ডাল, তেলসহ দ্রব্যমূল্যর প্রতিবাদে এবং দ্রুত দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে আনার দাবিতে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের চরম ব্যর্থতা ও খামখেয়ালীপনার কারণে জনগণকে আজ চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।
সংগঠনের সভাপতি ডা. ফজলুর রহমানর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আনোয়ার হোসেন রেজা, পঞ্চগড় জেলার সভাপতি আশরাফুল আলম, রংপর জেলার সাধারণ সম্পাদক হাফিজার রহমান, দিনাজপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন, নাটের জেলার নেতা নির্মল চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলার আহ্বায়ক সৈয়দ মোশারফ আলী, বগুড়া জেলার সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত মাহাতো, নেত্রকোণা জেলার সভাপতি নলিনী কান্ত সরকার, সুনামগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক শাহজালাল সুমন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ পরিচালনা করেন সংগঠনের সহ সাধারণ সম্পাদক অর্ণব সরকার।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেসক্লাব থেকে পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়।
এর আগে গত ৫-৬ নভেম্বর পুরানা পল্টনস্থ মুক্তিভবনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির দুইদিনব্যাপী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, একদিকে গরিব মানুষের নামে বরাদ্দসহ দেশব্যাপী চলছে লুটপাট-দুর্নীতি অন্যদিকে চাল, তেল, ডালসহ দ্রব্যমূল্যের সাথে হঠাৎ করেই কেরোসিন ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধি করে সরকার জনগনণের সাথে তামাশা করেছে।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতি রোধ, লুটপাট-দুর্নীতি বন্ধর দাবি জানান।
রিপোর্টের ওপর আলোচনায় নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার একের পর এক জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। সর্বশেষ এক রাতের সিদ্ধান্তে কেরোসিন ও ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করে মূল্যবৃদ্ধির সরকারহিসেবে ইতিহাস তৈরী করেছে।
বক্তাগণ বলেন, গ্রামের সাধারণ মানুষ একদিকে দীর্ঘ দেড় বছর করোনার কারণে বেকার জীবনযাপন করে দরিদ্র থেকে আরও দরিদ্র হয়েছে। অপরদিকে একশ্রেনীর টাউট বাটপার নতুন করে কোটিপতি হয়েছে। করোনাকালে সরকার গরিব মানুষের জন্য প্রণোদনার নামে বরাদ্দ করলেও তার সিংহভাগই দলীয় লোকজন ও চেয়ারম্যান-মেম্বার ও সরকারি কিছু কর্মকর্তা লুটপাট করে নিয়েছে।
সভায় সম্প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলা করে হত্যা, জখম, পুজামন্ডপ, বাড়িঘরে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও হামলার নিন্দা জানান এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দুর্নীতির চিত্র মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। অসংখ্য সাধারণ মানুষ বিনা চিকিৎসায় করোনায় মৃত্যুবরণ করেছে। অথচ সরকার বলছে, দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে চলছে। নেতৃবৃন্দ ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শুরু করে সকল সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার নিশ্চয়তার দাবি করেন।
বক্তাগণ এসব লুটপাট দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ক্ষেতমজুর সমিতির নেতৃত্বে গ্রামে গ্রামে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। রিপোর্টের ওপর আলোচনা করেন সংগঠনের নেতা জয়নাল খান, পরেশ কর, আশরাফুল আলম, অ্যাড আবুল হোসেন, মৃন্ময় মন্ডল, নলিনী কান্ত সরকার, মফিজার রহমান, লোকমান হোসেন, নির্মল চৌধুরী, সৈয়দ মোশারফ আলী, শাহজালাল সুমন, সাহা সন্তোষ, সন্তোষ রায় চৌধুরী,লিয়াকত আলী কাক্কু, আব্দুল আউয়াল, শ্রীকান্ত মাহাতো, এখলাছুর রহমান চৌধুরী, আবুল কালাম, আবুল হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমানে গ্রামে কোন কাজ নেই। তারা কাজের আশায় বিভিন্ন শহরে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। ‘৮০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি’তে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, কর্মহীন সময়ে গ্রামের ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুরদের জন্য এ কর্মসূচি চালু হলেও তা কাগজে কলমেই থেকে যাচ্ছে। কোন কাজ করিয়ে শ্রমিকদের টাকা না দিয়েই প্রকল্পর টাকা উত্তোলন করে ভাগ বাটোয়ারা করে কর্তাব্যক্তিরা নিয়ে নেন। নেতৃবৃন্দ পূর্বের ন্যায় ‘১০০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি’ পুনরায় সকল উপজেলায় চালু ও দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণের দাবি করেন।