আবার তালেবানের আফগানিস্তান! বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
“আফগান যুদ্ধ শেষ। এবার নতুন সরকার গঠন হবে”।
কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্যালেসের দখল নিয়ে তালেবান সংবাদমাধ্যমের বরাতে এ ঘোষণা জানিয়েছে।
প্রায় দুই দশক পর আফগানিস্তানের দখল আবার নিজেদের হাতে তুলে নিলো তালেবান৷
জার্মানভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ডিডব্লিউ বাংলার এক প্রতিবেদনে আজ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
তালেবান জানিয়েছে, যুদ্ধ শেষ। তাদের উপর আক্রমণ না হলে তারা আর লড়াইয়ের রাস্তায় যাবে না। বিদেশি কূটনীতিক এবং দেশের প্রশাসনকে তারা আশ্বস্ত করে বলেছে, সকলকেই আফগানে থাকার সুযোগ দেওয়া হবে। কোনোরকম আক্রমণ হবে না। তা সত্ত্বেও বহু মানুষ পালাচ্ছেন। বিমানবন্দরের বাইরে লম্বা লাইন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, অনেকেই গাড়িতে চাবি রেখে বিমানবন্দরে ঢোকার চেষ্টা করছেন।
তালেবান মুখপাত্র জানিয়েছেন, শরিয়া আইন মানলেও এবারের সরকার আগের চেয়ে আধুনিক হবে। তবে নতুন নিয়ম কী হবে, তা এখনো তালেবান জানায়নি। দুই-একদিনের মধ্যেই তা জানানো হবে বলে মুখপাত্র জানিয়েছেন।
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ”আরো এক বছর বা পাঁচ বছরও যদি মার্কিন সেনা যদি আফগানিস্তানে থাকতো, তাহলেও কোনো ফারাক হতো না। আফগান সেনাই নিজের দেশকে রক্ষা করতে পারল না। অন্য দেশের অসামরিক বিরোধ মেটাতে অ্যামেরিকার সেনা অনন্তকাল ধরে সেখানে থাকবে এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”
তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন বলেছেন, যে কারণে অ্যামেরিকা আফগানিস্তানে গিয়েছিল, তা পূর্ণ হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি খুবই কঠিন জায়গায় চলে গেল এবং ভবিষ্যতে তা আরো খারাপ হতো পারে। তার মতে, কোনোরকম চুক্তি ছাড়া সমমনোভাবাপন্ন দেশগুলি যেন তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি না দেয়।
এছাড়া চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং আজ (সোমবার) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন আফগান জনগণের ‘ইচ্ছা ও পছন্দকে’ চীন সম্মান করে।
চীনা মুখপাত্র বলেন, তালেবানের সাথে চীনের যোগাযোগ রয়েছে। “আফগান তালেবান বার বার বলেছে তারা চীনের সাথে সুসম্পর্ক চায়। আমরাও তাদের এই ইচ্ছাকে স্বাগত জানাই”। তিনি বলেন, “চীন সবসময় আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং ভৌগলিক অখণ্ডতাকে মর্যাদা দিয়েছে”।
তালেবানের কাবুল দখলের পরদিনই চীনা সরকারের পক্ষ থেকে এই মন্তব্য ইঙ্গিত করে কাবুলে ভবিষ্যৎ তালেবান সরকারকে বেইজিং মেনে নিতে প্রস্তুত।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সোমবার সকালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠক ডেকেছে। সকাল দশটায় বৈঠক শুরু হওয়ার কথা।
সূত্র জানাচ্ছে, তার আগেই ভারত জাতিসংঘে নিজেদের অবস্থান খানিকটা স্পষ্ট করে দিয়েছে। ভারত জানিয়েছে, তালেবান সরকার গড়লে ভারত তাকে স্বীকৃতি দিয়ে চায় না। বস্তুত, নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে থাকা ১৯৩টি দেশের মধ্যে অনেকেই ভারতের এই অবস্থান সমর্থন করেছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নোটিস দিয়ে জানিয়েছে, সোমবার থেকে জয়শঙ্করের মার্কিন সফর শুরু হচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদে দুইটি আলোচনাসভায় তার নেতৃত্ব দেওয়ার কথা। যার একটি ১৮ তারিখ এবং অন্যটি ১৯ তারিখ। ১৮ অগাস্টের সভা সন্ত্রাসবাদ এবং শান্তি প্রকল্প নিয়ে হওয়ার কথা। সন্ত্রাসবাদ কীভাবে আন্তর্জাতিক শান্তি বিঘ্নিত করছে তা নিয়ে দ্বিতীয় সভা হওয়ার কথা।
এদিকে তালেবানের কাবুল দখলের পরদিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন “আফগানরা দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গেছে’।
পাকিস্তানে ইংরেজি শিক্ষা নিয়ে এক বক্তৃতায় ইমরান খান এই মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছেন বিবিসি উর্দু বিভাগের সারাহ আতিক।
কূটনীতিকদের বক্তব্য, দুইটি সভাতেই তালেবান প্রসঙ্গ সামনে আসবে। সেখানে আন্তর্জাতিক কূটনীতি কীভাবে তালেবান সরকারের বিষয়টিকে দেখবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
তবে রোববার রাতে ওয়াশিংটন জানিয়েছে, আফগান কর্মীদের নিয়ে শেষ বিমান উড়ে গেছে। আপাতত কেবল মার্কিন কর্মীদেরই দেশে ফেরানো হবে।
শনিবারেই পাঁচ হাজার সেনা আফগানিস্তানে পাঠিয়েছিল আমেরিকা। দূতাবাস কর্মী, কূটনীতিক, এনজিও-কর্মীদের নিরাপদে বিমানবন্দর পর্যন্ত নিয়ে আসা এবং বিমানবন্দর সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাদের উপর। রোববার আরো এক হাজার সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা।
জার্মানিও দূতাবাস কর্মীদের ফেরাতে আফগানিস্তানে সেনা পাঠিয়েছে। সমস্ত দূতাবাস কর্মীকে বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়েছে। জার্মান এবং মার্কিন দূতাবাস কর্মীদের হেলিকপ্টারে করে বিমানবন্দরে আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রোববার রাতেই পালিয়ে গেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। নিজেই একটি টুইট করে জানিয়েছেন, লড়াই থামাতে এবং রক্তস্রোত এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তাজাকিস্তানে পালিয়েছেন গনি।
আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রেসিডেন্টের রাজপ্রাসাদে ঢুকে পড়ে তালেবান বাহিনী। রাজপ্রাসাদের মাথা থেকে আফগানিস্তানের পতাকা নামিয়ে দেওয়া হয়। প্রাসাদের কনফারেন্স রুম থেকে তারা সংবাদমাধ্যমকে জানায়, যুদ্ধ শেষ। এবার নতুন ইসলামিক আফগানিস্তান গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
উল্লেখ্য, রোববার এবং সোমবার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে তালেবান। জালালাবাদ এবং কাবুলের জেল থেকে প্রায় সমস্ত বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তালেবান এবং আইএস বন্দির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।