এ বছর শিশুদের নোবেলখ্যাত ‘আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার’ পেয়েছে বাংলাদেশের নড়াইল জেলার কিশোর সাদাত রহমান (১৭)।
‘সাইবার বুলিং’ থেকে শিশুদের রক্ষায় কাজ করে এ বছর ‘আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার’ পান নড়াইলের এই কিশোর।
নেদারল্যান্ডসের হেগে গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে অনলাইনে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে ১৭ বছর বয়সী সাদাতের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই।
গত বছর এ পুরস্কার পেয়েছিলেন সুইডেনের কিশোরী পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ।
শিশুদের অধিকার ও নিরাপত্তার বিষয়ে অবদানের জন্য নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক সংগঠন ‘কিডস-রাইটস’ প্রতিবছর এ পুরস্কার দিয়ে থাকে।
সংগঠনটির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, এ বছর ৪২টি দেশের ১৪২ জন প্রতিযোগীর মধ্যে এক্সপার্ট কমিটি সাদাতকে নির্বাচন করেছে।
ডেইলি স্টারের সাথে এক সাক্ষাৎকারে ‘সাইবার টিন’ অ্যাপস সম্পর্কে সাদাত বলেন, “নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় বন্ধুদের সঙ্গে ‘নড়াইল ভলানটিয়ারস’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। সে সময় সংগঠনের হয়ে সমাজসেবামূলক কাজ করতাম। গত বছর পিরোজপুরের এক কিশোরীর অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার খবর জানতে পারি। খবরটি আমাকে বেশ ভাবিয়ে তোলে। বিশেষ করে কিশোরীদের জন্য এসব ক্ষেত্রে সাহায্য পাওয়ার তেমন সহজ কোনো উপায় নেই। সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয় ছাড়াও, পুলিশ এই বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয় না।”
“এই সমস্যা সমাধানে ভুক্তভোগী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করতে ‘সাইবার টিন’ অ্যাপস সহায়ক হিসেবে কাজ করছে,” বলে সাদাত জানান।
২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর থেকে অ্যাপটির যাত্রা শুরু হয় বলে জানান তিনি।
মেক্সিকো ও আয়ারল্যান্ডের অন্যান্য দেশের কিশোরদের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের চূড়ান্ত তালিকাভুক্ত হওয়ার বিষয়ে সাদাত রহমান বলেন, “নড়াইল বাংলাদেশের প্রত্যন্ত একটি এলাকা। এখান থেকে আমার কাজ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে, এ আমার কাছে স্বপ্নের মতো। জিতবো কিনা জানি না। তবে, আমি আত্মবিশ্বাসী। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘সাইবার টিন’ নড়াইল ছাড়িয়ে আরও মানুষকে সাহায্য করবে।”
২০০৫ সালে রোমে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীদের এক সম্মেলন থেকে সম্মানজনক এই পুরস্কার চালু করা হয়। প্রতিবছর একজন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী পুরস্কারটি হস্তান্তর করেন।
এর আগে মালালা ইউসুফজাই, সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, ফ্লোরিডার স্কুলে বন্দুকধারীর গুলিতে বহু হতাহতের পর যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ‘মার্চ ফর আওয়ার লাইভস’র আয়োজক শিক্ষার্থীরা এই পুরস্কার পেয়েছেন।
সাখাওয়াত হোসেন ও মলিনা খাতুন দম্পতির একমাত্র সন্তান সাদাত। দাদার বাড়ি মাগুরা এবং নানার বাড়ি যশোরে। বাবা পোস্ট অফিসের কর্মকর্তা হিসেবে আগে নড়াইলে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলায় কর্মরত।
আগামী ১৭ নভেম্বর দেশে ফেরার কথা রয়েছে সাদাত রহমানের। তিনি হ্যালোর একজন শিশু সাংবাদিক।