অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় সিপিবি’র বিক্ষোভ
দেশের অধিকাংশ কারখানা শ্রমিকের জন্য মৃত্যুফাঁদ। এসব কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে, বিল্ডিং ভেঙে শ্রমিক হত্যার পর যথাযথ বিচার না হওয়ায় এ ধরণের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে।
নারায়ণগঞ্জের সেজান কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ঢাকা কমিটি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
আজ (১২ জুলাই) সোমবার বেলা ১২টায় রাজধানীর পল্টন মোড়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ঢাকা কমিটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সেজান কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শুধু মালিককে নয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরের প্রধানদের গ্রেপ্তার, বিচার ও নিহত-আহত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ দিতে হবে। সরকারের দায়িত্বহীনতা ও এ ধরণের কারখানা গড়ে উঠার সুযোগ দেওয়ার কারণে এসব ঘটনা ঘটেই চলেছে।
নেতৃবৃন্দ দায়িত্বহীনতার কারণে শিল্প ও শ্রম মন্ত্রীকে অপসারণের দাবিও জানান।
সিপিবি ঢাকা কমিটির সভাপতি মোসলেহউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম, সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেল, শ্রমিকনেতা কাজী রুহুল আমিন। সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা কমিটির নেতা মানবেন্দ্র দেব।
সমাবেশে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, করোনা মহামারীতে মানুষ মাঠে নামতে পারছে না, এই সুযোগে দেশে বহু অপরাধ-অপকর্ম হচ্ছে। তিনি বলেন, সেজান কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এদের ওপর ভরসা করা যায় না। তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ও গণতদন্ত কমিটি গঠনের আহবান জানান। তিনি যার যার অবস্থান থেকে এ ধরণের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহবান জানান। তিনি বলেন, লুটেরা শাসক গোষ্ঠীর উচ্ছেদ ছাড়া এসব সংকটের সমাধান হবে না। এজন্য সারা দেশে গণসংগ্রাম, গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে স্বৈরাচারী, অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতন ঘটাতে হবে।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সেজান কারখানায় যারা পুড়ে কয়লা হলো, তাদের অধিকাংশ শিশু-কিশোর। এই সমাজ ব্যবস্থায় বেঁচে থাকতে এই বয়সের শিশু-কিশোররা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। আর মালিক এই মৃত্যু নিয়ে ঔদ্ধ্যত্বপূর্ণ কথা বলছে। কারণ এসব মালিকরা ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় আছে। ভোটবিহীন সংসদে এরাই আধিপত্য বিস্তার করে আছে। তিনি বলেন, শুধু মালিককে নয়, কারখানা পরিদর্শক সহ দায়িত্বপ্রাপ্ত সব দপ্তরের প্রধান ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ডা. সাজেদুল হক রুবেল বলেন, অতীতে তাজরীন গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন কারখানায় অগ্নিকাণ্ড, ভবন ধ্বসে শ্রমিক হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হলেও পরে তারা মুক্ত হয়ে নিরাপদ জীবন-যাপন করছে। গ্রেফতারকৃত মালিক হাসেম এর ক্ষেত্রে এ ধরণের ঘটনা ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? তিনি বলেন, এ সরকার মালিকপক্ষের, শ্রমিক বিরোধী সরকার। তিনি গণআন্দোলনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত করে অন্যায় অবিচার প্রতিরোধের আহবান জানান।
কাজী রুহুল আমিন তার বক্তৃতায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও আহত শ্রমিকদের নামমাত্র ক্ষতিপুরণ প্রত্যাখ্যান করে আইএলও’র সনদ অনুযায়ী নিহত-আহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ দেওয়ার দাবি জানান।
সভাপতির বক্তৃতায় মোসলেহউদ্দিন বলেন, কারখানার নামে মৃত্যুফাঁদ বন্ধ না করা পর্যন্ত কমিউনিস্টরা তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। তিনি করোনার মধ্যেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়ার আহবান জানান।
সমাবেশে ‘শ্রমিক হত্যাকারী সেজান জুস কারখানার মালিকের বিচার চাই’, ‘শ্রমিক হত্যার বিচার চাই’, ‘কলকারখান প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কাজ কী?’, ‘কারখানায় শ্রম আইন বাস্তবায়ন কর’, ‘নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর কারখানা চাই’, ‘কারখানা কেন মরণফাঁদ?’ ইত্যাদি দাবি লেখা ফেস্টুন বুকে ঝুলিয়ে ঘণ্টাব্যাপী এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা কমিটির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য লুনা নূর, খান আসাদুজ্জামান মাসুম, সদস্য শংকর আচার্য, মনিষা মজুমদার, সেকেন্দার হায়াত, ছাত্রনেতা ফয়েজউল্লাহ, দীপক শীলসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।